ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে চান্ডিকা হাথুরুসিংহের মেয়াদ ছিল আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। যদিও তার এই মেয়াদ শেষের আগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিদায় বলতে হলো লঙ্কান এই কোচকে। তাকে চুক্তির মেয়াদ শেষের আগেই তাকে একটি শোকজ লেটার পাঠিয়েছে বিসিবি। সেই সঙ্গে নতুন কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সের নাম ঘোষণা করেছে বিসিবি।
আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুসিংহেকে শোকজ এবং সাসপেন্ড করার ঘোষণা দেন বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে অসদাচরণ ও আচরণবিধি ভাঙার দায়েই মূলত হাথুরুকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ফারুক। সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, আইনগত কিছু বিষয় থাকায় শুরুতে তাকে শোকজ ও সাসপেন্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তারপরেই চুক্তি বাতিলের বিষয়টি আসবে। সব মিলিয়ে তাকে ছাঁটাইয়ের বিষয়টি পাকা করে ফেলেছেন তারা।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান কোচের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছিলাম মানিয়ে নিতে। দুই-তিনটা ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছেমতো ছুটি কাটানো, জাতীয় দলের খেলোয়াড়ে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনা কোনোভাবেই দলের জন্য ভালো উদাহরণ ছিল না। তাই তাকে ৪৮ ঘণ্টার শোকজ ও সাসপেনশন দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা স্থায়ী হয়ে যাবে।’
আগামী সপ্তাহেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের দুই টেস্টের সিরিজ শুরু হবে। সেই সিরিজের আগে ভারত সফর শেষে পরশু রাতে হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু ঢাকায় তাঁর আর থাকা হচ্ছে না।
তার বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে ৪৫ দিন ছুটির বিপরীতে প্রথম বছরে ৬৭ দিন এবং দ্বিতীয় বছরে ৫৯ দিন ছুটি কাটিয়েছেন এই কোচ। এ কারণেই তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে এটা ছিল হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় অধ্যায়। প্রথমবার বাংলাদেশের কোচের দায়িত্বে ছিলেন ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। সেবার হাথুরুসিংহে নিজেই কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝপথে তিনি ই–মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। সেবার তাঁর সঙ্গে চুক্তি ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার মাসখানেক পরই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে।
২০২৩ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসেন শ্রীলঙ্কার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ৩৫ হাজার ডলারে তার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে। যে চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে চুক্তি শেষের আগেই বাংলাদেশ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটছে এবারও।
ফারুক আহমেদ বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পরই হাথুরুসিংহেকে সরিয়ে দেওয়ার আভাস দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে হাথুরুর অধীনে ১০টি টেস্ট, ৩৫টি ওয়ানডে ও ৩৫টি টি–টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্টে হারজিত সমানে সমান—৫টি জয় ও ৫টি হার। তবে ওয়ানডেতে ফল ছিল হতাশাজনক—৩৫ ম্যাচে ১৩টি জয়, হার ১৯টি, ৩ ম্যাচে ফল হয়নি। টি–টোয়েন্টিতে ৩৫ ম্যাচের ১৯টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, হেরেছে ১৫টি, একটিতে ফল হয়নি।