বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের অনন্য ঠিকানা: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশঃ ২০২৩-০৮-২৩ - ১৭:৫৩

ইউনিক ডেস্ক : সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ এখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনন্য ঠিকানায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবাসী বাংলাদেশ ও বিদেশি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৩ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের একটি হোটেলে আয়োজিত ব্যবসায়িক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে যুক্ত হন।

বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ এক অনন্য ঠিকানা হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আফ্রিকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আইসিটি, অবকাঠামো, ট্যুরিজম, ভারী ও হালকা শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। অবশ্যই এতে দুই দেশই উপকৃত হবে। নীতিগতভাবে সবধরনের সহায়তা দিতে বাংলাদেশ সরকার প্রস্তুত।’

বাংলাদেশকে একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার স্বপ্নের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটি স্বপ্ন আছে যা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্ন। তা হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি এবং একটি সম্পূর্ণ উন্নত স্মার্ট জাতিতে পরিণত করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণে বাংলাদেশ তার বাণিজ্যিক পরিস্থিতিকে দৃঢ়তার সাথে শক্তিশালী করে চলেছে। তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের প্রচেষ্টা শুধু আমাদের জন্য সুবিধাই দেবে না বরং যারা আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে তাদের জন্যও লাভজনক প্রমাণিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা খুঁজে নিতে তারা বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ, এটি বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলোর সাথে নিজেকে পরিচিত করার উপযুক্ত সময়।

শেখ হাসিনা বলেন, এটিই সময় বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে জানার এবং এর ভবিষ্যতে এখানে বিনিয়োগ করার আমরা আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অবকাঠামো, টেক্সটাইল, পর্যটন, ভারী শিল্প এবং ছোট শিল্পের মতো খাতগুলোতে নানা সুযোগ সুবিধার প্রস্তাব করেছি। আমাদের সরকার সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশ সম্ভাব্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যেমন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সর্বোত্তম আয়ের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সবধরনের সহযোগিতা দেবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই আপনারা আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় অংশ নিন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন; আমরা আস্থাশীল যে আপনাদের বিনিয়োগ সাফল্যের জন্য প্রাধান্য পাবে এবং আমরা একটি টেকসই অংশীদারিত্বের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।

দক্ষিণ আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি নাগরিক একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ। আমরা আপনাকে আমাদের প্রবৃদ্ধিতে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আসলে, আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ সুরক্ষিত রয়েছে অব্যাহত হাই রিটান্স ইনভেস্টমেন্টের(আরওআই) কারণে। এছাড়া, আমাদের সরকার ব্যবসা-বান্ধব এবং স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে যা আপনার বিনিয়োগের সফলতার নিশ্চয়তা দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয় এবং বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের রয়েছে সবচেয়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নীতি। এর মধ্যে রয়েছে একটি উদারীকৃত শিল্প নীতি, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, ১০০% বিদেশি মালিকানার ভাতা, একটি সহজ প্রস্থান নীতি, ১৫-বছরের কর ছাড় নীতি, আমদানি করা যন্ত্রপাতির জন্য ভ্যাট ছাড়, সুবিন্যস্ত পরিষেবা এবং আরও অনেক কিছু।

গত এক দশকে বাংলাদেশ আফ্রিকার নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতা উভয়েই আফ্রিকার অর্থনীতির সম্ভাবনা ও শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কের সুবিধার কথা স্বীকার করে। আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি, দ্রুত বর্ধিত জনসংখ্যা ও ভোক্তা চাহিদার কারণে অঞ্চলটি বাংলাদেশি পণ্য রফতানির একটি আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, একই সাথে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে আফ্রিকান দেশগুলো থেকে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামাল সংগ্রহের উপায় খুঁজছে। এই অন্বেষণের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্প, খনিজ, পেট্রোলিয়াম পণ্য, তুলা, কৃষিপণ্য ও আরও অনেক কিছুর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত পাঁচ দশকে, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধা, অভীন্ন মূল্যবোধ ও বিশ্বাস এবং সংস্কৃতিক বন্ধনের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই বন্ধন ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সংযোগের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হয়েছে। উভয় দেশই উন্নয়নের একই পথে আছে- যা পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নকে সম্ভবপর করে তোলে।