কামরুল হোসেন মনি : দাবদাহ বাড়ছে,বাড়ছে ডায়রিয়া। গরমে তেষ্টা মেটাতে দূষিত পানি পান, বাজারের বাশি-পচা খাবার খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি মাসে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৮৭ জন।মার্চ মাসে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে ৪১৩ জন। দাবদাহে খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ডায়ারিয়া প্রকোপ বেড়েছে। সংক্রামক হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছে ২০ জনেরও বেশি।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল সূত্র মতে, প্রতি বছর এ সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। চলতি সপ্তাহ জুড়ে হাসপাতালে আসছে রোগী। বেড স্বলতায় রোগীদের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে গরম বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ডাক্তারদের অভিমত। ওই সূত্র মতে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ২৪ তারিখ পর্যন্ত শিশুসহ মোট ১ হাজার ৪১৩ জন ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত কছেশ মাসের তুলায় চলতি মাসে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৯০ জন ডায়রিয়া আক্রান্তদের সেবা প্রদান করা হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে ৩২৩ জন, মার্চ মাসে ৪১৩ জন আক্রান্ত হন এর মধ্যে একজন মারা যান। এছাড়া চলতি মাসে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত ৪৮৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়েছে।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ উম্মে সালমা বলেন, বছরের দু’বার ডায়রিয়া প্রকোপ দেখা যায়, গ্রীষ্মে ও শীত মৌসুমে। গরম বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় ডায়রিয়া স্যালাইন কম রয়েছে। এছাড়া অন্য সব ওষুধের কোন ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, অসেচতনতা ও দারিদ্র্যের কারণে কেউ বাসি খাবার খান। গরমে একটু পরিত্রাণের আশায় অনেকে রাস্তার ধার থেকে কিনে শরবত খেয়ে নিচ্ছেন। গ্রীষ্মের তাপদাহ যথাসম্ভব এগুলো আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে।
মঙ্গলবার নগরীর মীরের ডাঙ্গা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল রোগীর ভিড়। বেড খালি না থাকায় অনেকেই মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। মারাত্মক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নেতিতে পড়া এক শিশুটিকে কোলে নিয়ে তার মা আমেনা ডাক্তারের চেম্বারের প্রবেশ করলেন। গত তিন ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও এখনো পর্যন্ত তার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। বমির পাশাপাশি একাধিকবার পাতলা পায়খানা হয়েছে।
নগরীর গগণবাবু রোডে এলাকার বাসিন্দা সুমি আক্তার, গেল সোমবার একটি সন্তান জন্ম দেন। ঔদিনই তাঁর ডায়রিয়া শুরু হয়।তবে কেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তা তিনি বুঝতে পারেননি। দিঘলিয়া সেনহাটি এলাকার থেকে রহিম খা(৫৫) ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। পেশায় তিনি একজন রিক্সা চালক। সোমবার দুপুরে বাইরে থেকে একটি পাউরুটি খান। এর পর বিকেল থেকে পেট ব্যাথা শুরু হয়। এরপর বমি। তারপর একাধিক বার পায়খানা আরম্ভ হয়। রাত টুকু কোন মতে পার করে সকালে এখানে ভর্তি করা হয়েছে। একাধিক রোগী অভিযোগ করেন, ভর্তি হওয়ার পরপরই হাসপাতাল থেকে মাত্র একটি স্যালাইন আর গ্যাসে ও ব্যাথার ট্যাবলেট দিচ্ছেন। এর বাইরে অন্যসব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনা লাগছে। অথচ হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট অরিন্দ্র কুমার মল্লিক বলেন, ডায়রিয়া রোগীর চাহিদার তুলনায় স্যালাইন সাপ্লাই কম। গত ৬ মার্চ এক হাজার ব্যাগ (১ হাজার সিসি) স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন ৫শ’ ব্যাগ রয়েছে। চলতি মাসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৫ হাজার ব্যাগ সালাইনের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। অন্য ওষুধের সংকট নেই বলছেন চিকিৎসকরা!
খুলনা সরকারি আবওয়া অফিস সূত্র মতে, গত ২-৩ দিনের তাপমাত্রা উঠানামা করছে। এর মধ্যে গত ২২ এপ্রিল খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এর পর ২৩ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিল ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াম ও সর্বোনি¤œ ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। মঙ্গলাবর বাতাসের গতিবেগ থাকায় আগের দিনের তুলনায় একটু তাপমাত্রা কম বলে খুলনা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবীদ আমিরুল আজাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ২-১ দিনের মধ্যে ঝড়ো হাওয়া অথবা দমকা হাওয়াসহ ঝড় বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে।