খুলনা : ‘বাবা তুমি কোথায় চলে গেলা বাবা। আল্লাহ আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দাও। আমার সন্তানকে এনে দাও আল্লাহ। আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার বাবা তো আর জীবিত ফিরতে পারবে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে ধরা গলায় আবার শুরু, বিদেশ থেকে ফেরার পরেই আমার বাবার বিয়ের কথা ছিলো। ও বলেছিলো, আমার বিয়েতে অনেক ধুমধাম হবে, বিয়েতে অনেক মজা করবো। কিন্তু কি হয়ে গেলো…’
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত খুলনার আলিফুজ্জামান আলিফের বাসায় গেলে দেখা যায়, বিলাপ করতে করতে আলিফুজ্জামানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা আসাদুজ্জামান এসব কথা বলছেন।
আলিফের নিহত হওয়ার খবর শোনার পর থেকে অবিরাম কান্নায় এখন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মায়ের গলার স্বর। অসহায়ের মতো তিনি চেয়ে আছেন। দেখছেন এদিক-ওদিক। খুঁজছেন তার ছেলেকে।
আলিফদের তৃতীয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন আলিফ। ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ে আলিফের ছোট চাচা বাবর আলীসহ বড় ভাই আশিকুর রহমান হামিমের দিকে। আলিফকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান তারা। একাধারে কেঁদেই চলেছেন, আর আলিফের সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতিরপ্লেনে ওঠার আগে আলিফের সেলফি, সন্তান হারিয়ে কাঁদছে পরিবার কথা আওড়াচ্ছেন। সময় যতই গড়াচ্ছে ততই স্বজনদের ভিড় বাড়ছে, বাড়ছে শোকের মাতম।
আলিফের বড় ভাই আশিকুর রহমান হামিম বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় যশোর থেকে বিমানে ঢাকায় যাওয়ার পথে মায়ের সঙ্গে আলিফের শেষ কথা হয়- মা নেপালে পৌঁছেই তোমাকে ফোন দেবো, কিন্তু সে আর ফোন দিতে পারেনি।
আলিফুজ্জামানের খালাতো দুলাভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, ৬ মাস আগে আলিফের বড় ভাই বিয়ে করেছে। ও ঠিকাদারি করে। আলিফকে বিয়ে দেওয়ার কথা চলছিলো।
আলিফের খালাতো বোন রাহিমা আক্তার শান্ত জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার ফ্লাইটে তার খালু শাহাবুর রহমান আলিফের মরদেহ আনতে নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
সোমবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত আরোহীদের মধ্যে আলিফ ছিলেন একজন। আলিফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে। খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। খুলনার বিএল কলেজ থেকে এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। ৩ ভাইয়ের মধ্যে আলিফুজ্জামান ছিলেন মেজো।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি নিহত আলিফুজ্জামান আলিফের বাসবভনে যান। এ সময় মেয়র নিহতের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান মোল্লাসহ পরিবারের শোকাহত সদস্যদের সান্তনা দেন। সিটি মেয়র শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং পরিবারের সদস্যরা এ শোক যেন দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন সেজন্য দোয়া করেন। তিনি নিহত আলিফুজ্জামানসহ দুর্ঘটনায় নিহত সবার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা মো. ফকরুল আলম, অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, শেখ আব্দুর রশিদ, সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে শেখ আনিছুর রহমান, মোল্লা এনামুল কবির, শেখ আফজাল হোসেন, মো. এনামুল কবির সজল, আরিফ মল্লিক, হাবিবুর রহমান বেলাল, মো. শাহেদ প্রমুখ।