ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় হেফাজতের তাণ্ডবে শত কোটি টাকার ক্ষতি : পৌর মেয়র

প্রকাশঃ ২০২১-০৪-০৩ - ১৭:৫৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবে পৌরসভার প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাণ্ডবের ঘটনা পার হওয়ার ৬ষ্ঠ দিনে দেওয়া আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবীর এসব কথা জানান। আজ শনিবার দুপুরে তার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

পৌরমেয়র নায়ার কবির বলেন,‘ গত ২৬ মার্চ আমরা মহান স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলাম। ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে বিভিন্ন মাদ্রাসার একদল সংঘবদ্ধ ছাত্র বিভিন্ন স্লোগানে আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে উপস্থিত হয়। এসময় তারা স্বাধীনতা দিবসের ব্যানার ফেস্টুন ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলাকালে তারা শাবল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ক্ষত-বিক্ষত করে।

দ্বিতীয় দফায় ২৮ মার্চ হেফাজত ইসলামের হরতাল চলাকালীন সময়ে স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের স্থানীয় নেতা-কর্মী এবং বিগত পৌর নির্বাচনে পরাজিত আমার ( মেয়রের) নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনুগত একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি বেলা ১১টার দিকে পুনরায় বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে এসে হামলা করে। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর করে, এরপর পৌরভবন এবং সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে গান পাউডার ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ সময়ে ভীত স্বতন্ত্র পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পার্শ্ববর্তী সুইপার কলোনিতে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। পরে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলাকারীরা অফিসের সব ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে এবং বিপুল সংখ্যক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ সময় আগুনে পুরে পৌরভবন ও পৌর মিলনায়তন ভবন পুড়ে ছাই হয়। আগুনে বিভিন্ন গুদাম ও নথিপত্র সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুড়তে থাকে।

লিখিত বক্তব্যে পৌর মেয়র আরও বলেন, হেফাজতে ইসলাম ও তার সমর্থকরা মেয়রের কক্ষ, সচিবের কক্ষ, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কক্ষ, প্রধান সহকারীর কক্ষ, হিসাব রক্ষকের কক্ষ, ক্যাশিয়ার কক্ষ, পিএ কক্ষে প্রবেশ করে গানপাউডার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। চারতলা বিশিষ্ট পৌর কমপ্লেক্স ভবন ও পৌর কার্যালয়ে রক্ষিত সকল কাগজপত্র, আলমারি, কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, ল্যাপটপ, এসি এবং পৌরসভার নিচতলার রাখা সব গাড়ি ও জনসেবায় নিয়োজিত সংরক্ষণ শাখা, বিদ্যুৎ শাখা, যান্ত্রিক শাখা, সাধারণ শাখা এবং স্বাস্থ্য শাখার স্টোররুমে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এতে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

তিনি বলেন, আমার বাসভবনের নিচতলাতেও তারা জোর তরে ঢুকে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। বাসার নিচতলায় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং বাসার নিচতলায় আমার গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

মেয়র বলেন, ‘পৌরসভার নিয়মিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বহি (বই)সহ অনেকের ব্যক্তিগত কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে তারা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া পৌর এলাকাধীন বিভিন্ন সরকারি দফতরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।

নায়ার কবীর বলেন, দেড়শ বছরেরও পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই প্রাচীনতম পৌরসভার সব রেকর্ডপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। পৌরসভার বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদান কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ আছে।

এসময় পৌরসভার সব কার্যক্রম সচল করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সরকারি দফতর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সব নাগরিকের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন পৌরমেয়র। পাশাপাশি আগুন সন্ত্রাসীদের যথাযথ বিচার দাবি করেন। যেন ভবিষ্যতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এধরনের নারকীয় ঘটনা আর না ঘটে।