এস এম জামাল, কুষ্টিয়া : এক সময়ে গ্রাম বাংলায় কলা পাতায় খাবার পরিবেশন করা হতো। চেহলাম কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানেও কলা পাতায় করে আমন্ত্রিত লোকজনদের খাবার পরিবেশন করার রীতি প্রচলিত ছিল।
কালের পরিক্রমায়, এখন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন কোন অনুষ্ঠান হলে ডেকোরেটর ভাড়া করে চেয়ার টেবিলে বসিয়ে উন্নতমানের প্লেটে খাবার পরিবেশন করা হয়।
কেউ কেউ আরও আধুনিক হিসেবে ওয়ানটাইম প্লেটে খাবার পরিবেশন করেন।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রামীণ সমাজে এ পরিবর্তন হলেও গ্রাম বাংলায় এখনও দু’একটি অনুষ্ঠান হয়, যেখানে ফাঁকা মাঠ বা ক্ষেতে লাইন দিয়ে বসিয়ে কলা পাতায় করে আমন্ত্রিত লোকজনদের খাবার পরিবেশন করা হয়।
তবে সেটি যে বিরল তা শহরের মানুষ ঠিকই অনুধাবন করতে পারে।
পুরোনো দিনের সেসব কৃষ্টি ধরে রাখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক এ্যক্টিভিট ভালোবাসার কুষ্টিয়া নামাক সংগঠন কলাপাতা নামক বনভোজনের আয়োজন করে।
শনিবার ঘড়ির কাটা ঠিক দুপুর বারোটা। সংগঠনের সদস্যসহ রেজিষ্ট্রেশনকারী শুভাকাঙ্খীরা একে একে হাজির হতে থাকে কুমারখালীর অমর কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটায়। সেখানে অনেকেই ছবি তোলায় মেতে ওঠে।
পরে যখন মুল আয়োজন চলে কলাপাতায় খাবার উপভোগ। তখন এক নতুনত্ব সৃষ্টি হয়।
সেটিকে পিকনিক না বলে সত্যিকারের বনভোজন বলে অভিহিত করেছে অনেকেই। ফিরেে এসে শৈশবের সেই সময়টির কথা। একমুঠো চাল আর একটা ডিম দিয়ে বনভোজনের কথাও মনে পড়ে যায় কারও কারও।
কুষ্টিয়ার পরিবেশ বিজ্ঞানীেগৌতম কুমার জানান, কলা পাতায় খাবার পরিবেশনে ধর্মীয় কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এটি একটি কৃষ্টি। প্রাচীনকালে খাবার পাত্র অপ্রতুল থাকায় কলা পাতা বা শালপাতায় করে অতিথিদের খাবার পরিবেশন করা হতো। এছাড়াও কলাগাছের পাতা প্রাকৃতিক বস্তু হওয়ায় এর ব্যবহার হতো বেশি।
তবে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়া বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর মাজারে তিরোধান দিবস ও দোল পুর্নিমা অনুষ্ঠানে পুণ্য সেবায় কলাপাতায় করে ভাতা, মাছপিাচ রকমের তরকারী ও ডাল এবং দধি দেওয়া হয়।এই বিশেষ দিনে অন্তত ৫-৭ হাজার বাউল-ভক্তর ও অনুসারীদের আপ্যায়িত করা হয়।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাহিত্যিক হাসান টুটুল বলেন, এক সময়ে গ্রাম বাংলায় কলা পাতায় খাবার পরিবেশন করা হতো। চেহলাম কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানেও কলা পাতায় করে আমন্ত্রিত লোকজনদের খাবার পরিবেশন করার রীতি প্রচলিত ছিল। কালের পরিক্রমায়, এখন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। একদিন আসবে, যখন কলা পাতায় খাবার পরিবেশনের প্রচলনটিও হয়তো হারিয়ে যাবে।তাই বর্তমান প্রজন্মকে জানান দিতেই এই কলাপাতায় বনভোজনের আয়োজন মাত্র।