মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মামার বাড়ী ধ্বংসের পথে

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-১৭ - ২১:৩৯

পাইকগাছা : সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ও হারিয়ে যেতে বসেছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত পাইকগাছার কাটিপাড়াস্থ কবির মামার বাড়ী। স্থানীয়দের মতে তৎকালীন সময়ে কবি তার মামার বাড়ীতেই জন্মগ্রহণ করে ছিলেন। যদিও জন্মের এ বিষয়টি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। জন্ম যেখানেই হোক মামার বাড়ী কবির শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্থান। এটি সংরক্ষণে সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সূত্রমতে, বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই রচিত হয় কবির সাহিত্য জীবন। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে তিনি একে একে রচনা করেন মহাকাব্য তিলোত্তমাসম্ভব, মেঘনাদবধ, ব্রজ্ঞাঙ্গনা, বীরঙ্গনা, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, একেই কি বলে সভ্যতা, কৃষ্ণ কুমারী, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো ইত্যাদি নাটক ও প্রহসন সহ বিভিন্ন কাব্য ও কবিতা। কবি মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের জলকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে এবং তাকে চির অমর করে রাখার জন্য রচনা করেছিলেন বিখ্যাত সনেট কবিতা কপোতাক্ষ নদ। কবিতাবলী সনেট মধুসূদনের সাহিত্য জীবনে এক অতি মূল্যবান অমর সৃষ্টি, সনেট কবিতার জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যাকাশে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন যশোর জেলার কেশবপুর থানার কপোতাক্ষ তীরের সাগরদাঁড়ী গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার। মাতা জাহ্নবী দেবী ছিলেন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লী ইউনিয়নের কাটিপাড়া গ্রামের গৌরীচরণ ঘোষের কন্যা। মামার নাম বংশী লাল ঘোষ। বেশির ভাগ সূত্রমতে সাগরদাঁড়ীতেই কবির জন্ম হিসাবে দাবী করা হয়ে থাকে। তবে স্থানীয়দের মতে মামার বাড়ীতেই কবি জন্মগ্রহণ করে ছিলেন বলে দাবী করা হয়। মামার বাড়ী এলাকার শংকর দেবনাথ জানান, তৎকালীন সময়ে বেশিরভাগ নারীরা পিতৃলয়েই সন্তান প্রসব করতেন। এছাড়া এলাকার প্রবীণদের মধ্যে এখনো যারা জীবিত রয়েছেন তারা সবাই কবি মামার বাড়ী জন্মগ্রহণ করেছেন বলে অভিমত দিয়েছেন। সর্বপরী জন্ম যেখানেই হোক মহাকবি মাইকেলের শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত স্থান গুলোর মধ্যে তার মামার বাড়ী অন্যতম। তৎকালীন সময়ে কবির মামার বাড়ীর মন্দিরে প্রত্যেক বছর দোল উৎসব উদযাপিত হতো। আর এ উৎসব উপভোগ করতে কবি তার মায়ের সাথে মামার বাড়ীতে আসতেন। এমনকি ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার পরও কবি সর্বশেষ একবার তার মামার বাড়ীতে এসেছিলেন। এলাকায় প্রচলন আছে, খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করায় মামার বাড়ীর নারীরা তাকে বাড়ীতে ঢুকতে দেয়নি। কাছারি বাড়ীতেই কবিকে বসতে এবং খাইতে দেওয়া হয়। বর্তমানে কবির মামাদের মূলবাড়ীটি যেখানে ছিল সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। স্মৃতি হিসাবে এখনো অরক্ষিত অবস্থায় কালের স্বাক্ষী হিসাবে দাড়িয়ে রয়েছে স্মৃতি বিজড়িত ৩টি মন্দিরের অংশ বিশেষ। ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয় মন্দির ৩টি। যার একদিকে রয়েছে দোল মন্দির এটি সবচেয়ে সু-উচ্চ। মাঝে রয়েছে শিব মন্দির, যার পরেই রয়েছে চন্ডী মন্দির। সংরক্ষণের অভাবে মন্দির গুলোও ধ্বংস হতে চলেছে। এ জন্য এলাকাবাসীর দাবী কবির স্মৃতি বিজড়িত মামার বাড়ীর শেষ স্মৃতিটুকু হারিয়ে যাওয়ার আগেই সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার কবির সাগরদাঁড়ীর স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি ইতোমধ্যে সরকারি ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সেটি ধ্বংস হওয়ার আর কোন সম্ভবনা নেই। তবে মামার বাড়ীটিও স্মৃতি বিজড়িত স্থানের মধ্যে অন্যতম। এটিও সংরক্ষণ করা সরকারের দায়িত্ব। খুব দ্রুত এগুলো সংরক্ষণ করা না হলে ইতিহাস থেকেও হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে কবির শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত জন্মস্থান মামার বাড়ীর সকল স্মৃতি। সচেতন এলাকাবাসীর দাবী অবিলম্বে কবির স্মৃতি বিজড়িত মামার বাড়ীর সকল স্মৃতি, সকল স্থাপনা সংরক্ষণ করে এখানেই গড়ে তোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র। এ ব্যাপারে সরকার ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।