খুলনা : আগামী ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস (বন্ধন) ট্রেনটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। বাকী আর মাত্র এক মাস। সব ঠিকঠাক থাকলে এদিন খুলনা-কলকাতা রুটে বাণিজ্যিক ভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আর ট্রেন চলাচল শুরুর একমাস পূর্বে টিকিট বিক্রির কথা রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত টিকিটের মূল্য নির্ধারণ, বিক্রির তারিখ ও কাউন্টার ঠিকঠাক করা হয়নি। হয়নি ইমিগ্রেশনেরও সিদ্ধান্ত। ফলে এবারও নির্ধারিত তারিখে এ রুটে ট্রেন চলাচলে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর আগেও তিন দফা দিনক্ষণ ঠিক করেও এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। তবে আগামী ৩ নভেম্বর ঢাকা-কলকাতা রুটে ট্রেনের কাস্টমস ইমিগ্রেশন কার্যক্রম ঢাকায় উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এরপর খুলনা-কলকাতা রুটের ট্রেনের টিকিটসহ সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে রেলওয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, আগামী ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে ট্রেন যাত্রার দিন নির্ধারিত রয়েছে। আর এর এক মাস পূর্বে ট্রেনের টিকিট যাত্রীদের কাছে বিক্রির কথা। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত টিকিট কাউন্টার নির্ধারণ, টিকিটের মূল্য নির্ধারণ এমনকি বিক্রির তারিখের বিষয়েও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
খুলনা বিভাগীয় রেলওয়ের ম্যানেজার ওয়াসিম কুমার তালুকদার এ প্রতিবেদকে বলেন, আগামী ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে ট্রেন যাত্রার দিন ঠিক রয়েছে। এ জন্য খুলনা রেল স্টেশনের বর্তমান কাউন্টারের পাশে এ রুটের ট্রেনে যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হবে। এ জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় এখনও পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট বিক্রির তারিখ ঠিক হয়নি।
এদিকে রেলওয়ের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ ও ২৫ অক্টোবর দিল্লীতে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের রেল কর্মকর্তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নয়া দিল্লী যাবেন। ভারতের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বসে ভাড়া চূড়ান্ত করবেন তারা। নয়া দিল্লীর বৈঠকে কাস্টম-ইমিগ্রেশনসহ আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এ রুটে উভয় দেশের প্রান্তিক স্টেশন কলকাতার চিৎপুর আর খুলনাতেই সারা হবে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা। আর যদি এমনটা হয় তাহলে উভয় দেশের যাত্রীদের জন্য এটি সুখবর বয়ে আনবে। চেক পোস্টে দীর্ঘ যাত্রা বিরতির বিড়ম্বনা সইতে হবে না যাত্রীদের।
এর আগে নয়াদিল্লী রেলভবনে গত ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী ভারত-বাংলাদেশের রেল কর্মকর্তাদের বৈঠকে হয়েছিল। সেখানে ভাড়া নির্ধারণে উভয় দেশের কর্মকর্তা সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। তবে প্রাথমিক প্রস্তাবে চেয়ার কোচে আট ডলার এবং কেবিনে ১২ ডলার সিট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।
রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যমতে, ঢাকা-কলকাতার পর খুলনা-কলকাতা রুটে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেনটির নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছিল ‘সোনারতরী’। কিন্তু উভয় দেশের রেলে একই নাম ব্যবহৃত হওয়ায় তা বাদ দেওয়া হয়। এরপর প্রস্তাব দেওয়া হয় ‘সম্প্রীতি’ ও ‘বন্ধন’। পরে বন্ধন নামটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আর এই বন্ধন এক্সপ্রেস সপ্তাহে একদিন প্রতি বৃহস্পতিবার চলাচল করবে। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী দিন বাড়ানো হবে। আর এ রুটে যাত্রায় খুলনা থেকে কলকাতা পর্যন্ত পৌনে দুইশ’ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। সকাল সাড়ে ৭টায় কলকাতার চিৎপুর থেকে যাত্রী নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্ধন পৌঁছাবে খুলনায়। এরপর দুপুর দেড়টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ফের কলকাতায় পৌঁছে যাবে। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে দীর্ঘ ৫২ বছর পর আগামী ১৬ নভেম্বর বন্ধনের যাত্রা শুরু হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে তিন দফায় দিনক্ষণ নির্ধারণ করেও খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী রেল চলাচল শুরু করা যায়নি। প্রথম দফায় গত পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) এ ট্রেন চালুর কথা ছিল। কিন্তু ওই তারিখে ট্রেন চালু করা সম্ভব হয়নি। এরপর দ্বিতীয় দফায় পহেলা জুলাই ও তৃতীয় দফায় ৩ আগস্ট ট্রেনটি চালুর উদ্যোগ নিলেও চালু হয়নি।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে খুলনা-কলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করত। বরিশাল থেকে যাত্রীরা স্টিমার ও রেলের টিকিট এক সঙ্গে কেটে খুলনায় স্টিমার থেকে নেমে ট্রেনে উঠতেন। নামতেন গিয়ে একেবারে শিয়ালদহ স্টেশনে। ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সারা হতো রেলের কামরার মধ্যেই। সীমান্তে কোন বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হতো না। এছাড়া ট্রেন চলাচল করতো ফরিদপুরের গোয়ালন্দ-কলকাতা রুটেও। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব রেল চলাচল। তবে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল খুলনা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ পরীক্ষামূলক চলাচল করে। এদিন সকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেনের নেতৃত্বে ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল খুলনা থেকে যাত্রা করে বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনে পৌঁছায় সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে। এদিন নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ভারত সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রেনটির যাত্রা উদ্বোধন করেন। পরের দিন সকাল সোয়া আটটায় কলকাতা থেকে ছেড়ে আসে মৈত্রী-২।