মার্চ মাসে ৪৮৬ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৪ জন

প্রকাশঃ ২০২৩-০৪-০৬ - ১৭:১০

ইউনিক ডেস্ক : গত মার্চ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। নিহত হয়েছেন ৫৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন ১০৯৭ জন। নিহতের মধ্যে  ৮৮ জন নারী ও ৭৩টি শিশু রয়েছে।

বুধবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে গত মার্চ মাসে ১৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৪.৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬.৮৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৮.৯৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮১ জন, অর্থাৎ ১৪.৩৬ শতাংশ। এই সময়ে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে। ১৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র : দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৪ জন (৩৪.৩৯%), বাস যাত্রী ৫৩ জন (৯.৩৯%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৪৯ জন (৮.৬৮%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ২২ জন (৩.৯০%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১০৪ জন (১৮.৪৩%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম) ২৪ জন (৪.২৫%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী ১১ জন (১.৯৫%) নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৪টি (৩৭.৮৬%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৯৭টি (৪০.৫৩%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৯টি (১২.১৩%) গ্রামীণ সড়কে, ৪৩টি (৮.৮৪%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৩টি (০.৬১%) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন : দুর্ঘটনাসমূহের ৮৫টি (১৭.৪৮%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৪২টি (৪৯.৭৯%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি (২১.৩৯%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৩৯টি (৮.০২%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি (৩.২৯%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৫.২০%, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৭.০৩%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৩.৬৩%, যাত্রীবাহী বাস ১৪.৫৩%, মোটরসাইকেল ২৩.৩২%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-ট্রেইলার-হ্যান্ডট্রলি) ১৮.২৮%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-পাখিভ্যান-লোবেট-টমটম-মাহিন্দ্র-নাটাগাড়ি-পাওয়ারটিলার) ৫.৩৯% এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২.৫৭%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৮৫৩ টি। ট্রাক ১৪৭, বাস ১২৪, কাভার্ডভ্যান ২৭, পিকআপ ৪১, ট্রাক্টর ২৬, ট্রলি ১৭, লরি ৪, ড্রাম ট্রাক ৯, তেলের ট্যাঙ্কার ৩, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি ১, মাইক্রোবাস ১৩, প্রাইভেটকার ১৪, অ্যাম্বুলেন্স ৩, জেলা প্রশাসকের জীপ ১, মোটরসাইকেল ১৯৯, থ্রি-হুইলার ১৫৬ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-ট্রেইলার-হ্যান্ডট্রলি), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৬ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-পাখিভ্যান-লোবেট-টমটম-মাহিন্দ্র-নাটা গাড়ি-পাওয়ারটিলার) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২২টি।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান : দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪.৪৮%, প্রাণহানি ২৪.২৯%; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৬০%, প্রাণহানি ১৫.৪২%; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬.৮৭%, প্রাণহানি ১৭.১৯%; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৩৭%, প্রাণহানি ১২.৭৬%; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৭৯%, প্রাণহানি ৬.৭৩%; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৬১%, প্রাণহানি ৭.২৬%; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.০৮%, প্রাণহানি ৯.৫৭% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.১৭%, প্রাণহানি ৬.৭৩% ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে।

একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম ফেনি ও জামালপুর জেলায়। ৪টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছে।

নিহতদের পেশাগত পরিচয় : গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ২ জন, বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট ১ জন, আনসার সদস্য ১ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৯ জন, দন্ত চিকিৎসক ১ জন, পল্লী চিকিৎসক ২ জন, সাংবাদিক ৪ জন, আইনজীবী ৩ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ৬ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩৪ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৭ জন, পোশাক শ্রমিক ৫ জন, পদ্মা ব্রিজের রেল শ্রমিক ১ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ১ জন, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মচারী ১ জন।