মীরের ডাঙ্গা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৫৩ বছরেও  বাড়েনি শয্যা সংখ্যা

প্রকাশঃ ২০২১-০৬-০২ - ১৯:০৯

কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মহানগরীর মীরের ডাঙ্গায় অবস্থিত সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। (মার্চ থেকে মে পর্যন্ত) গত তিন মাসে ওই হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৯ জন। প্রতিদিন গড়ে ১১ জনের বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন। বেড স্বল্পতার কারণে ডায়রিয়া রোগীরা মেঝেতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দিনকে দিন গরমের তিব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কিছুটা গরম কাটলেও ভ্যাপসা গরম রয়েই গেছে। সংক্রমক ব্যধি হাসপাতালে ডায়রিয়া চিকিৎসার পাশাপাশি টিটেনাস, লিওমেটাল টিটেনাস, জলবসন্ত, হাম, জলাতঙ্কসহ অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ওই তিন মাসে টিটেনাস ও লিওমেটাল টিটেনাস আক্রান্ত একজন করে রোগী মারা যান। এছাড়া জল বসন্ত আক্রান্ত হয়ে ২ জন রোগী মারা গেছেন।
এদিকে গত ৫৩ বছর পাড় হলেও বাড়েনি সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে বেড সংখ্যা। পাশাপাশি লোকবল সংকট রয়েই গেছে। বাড়ছে দিনকে দিন রোগীর চাপ। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ চিঠি চালাচালির মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সূত্র মতে, চলতি মাসে মার্চ মাস থেকে ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, মার্চ মাসে ডায়রিয়া রোগী আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯৪ জন। এপ্রিল মাস থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই মাসে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩১৯ জন। মে মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৯৬ জন। এই হিসেবে দিনকে দিন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত সংখ্যা রোগী বাড়লে ডায়রিয়া রোগীদের বেড সংখ্যা বৃদ্ধি পাইনি। মাত্র ২০ শয্যা বেড নিয়ে ওই হাসপাতাল পরিচালনা হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর বেড রয়েছ ১০টি। এছাড়া টিটিনাস ও হামবসন্ত রোগীদের জন্য ৫টি করে মোট ১০টি বেড রয়েছে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি ও সংস্কারের জন্য চিঠি চালাচালি করলেও ওই সংকট রয়েই গেছে।
আল আমিন নামে এক ব্যক্তি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই ব্যক্তির মা সালমা বেগম জানান, গত সপ্তাহ তার ছেলের ডায়ারিয়ার পাশা পাশি বমি হচ্ছে। এখন একটু পায়খানা কম হলেও বমির ভাবটা কমেনি। যা খাচ্ছে, তাই বমি করে দিচ্ছে। তিনি দিঘলিয়া উপজেলার এলাকার বাসিন্দা।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (এমও) ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে ডায়ারিয়া রোগীর ভিড় বাড়ছে। দিনে-রাতে আসছে এসব রোগী। হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় ১ বছরের নিচে শিশুরা ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। ডায়ারিয়া রোগীর পরিস্থিতি বুঝে একজন রোগীর পেছনে প্রতিদিন ২ থেকে ৩টি স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে ৫টি স্যালাইনও দেয়া লাগছে। শিশুদের হাত মুখে দেয়ার কারণে হাত পরিস্কার রাখার পরামর্শ দেন। কারণ হাতের ঘামের সাথে ময়লাগুলো শিশুদের পেটে যাওয়ায় ডায়ারিয়া সম্ভবনা থাকে। চলতি পথে রাস্তার ধারে শরবত না খাওয়ার জন্য শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদের পরামর্শ দেন । হাসপাতালে বেড স্বল্পতার কারণে তিনি বলেন, প্রতি মাসেই মাসিক প্রতিবেদনের সাথে বেড সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবনের সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হচ্ছে। আমার জানা নেই কবে এই সংকট দুর হবে। আমাদের প্রয়োজন তাই আবেদন করেই যাচ্ছি।
হাসপাতালে সূত্র মতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ডায়রিয়া, টিটেনাস, হাম, জলাতঙ্কসহ সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় জন্য ১৯৬৮ সালে খুলনার মীরেরডাঙ্গায় ভৈরব নদীর পাশে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ৪ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা হাসপাতালটি ২০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ৫৩ বছর পার হলেও বেড সংখ্যা বাড়েনি। বদলায়নি হাসপাতালের চিত্র। বাড়েনি হাসপাতালের জনবল। কিন্তু রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অর্ধশত বছর আগের তৈরি করা হাসপাতাল ভবনটি এখন জরাজীর্ণ। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসার ও নার্সদের আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কর্মচারীদের জন্য দুটি ডরমেটরি ভবনও বসবাসের অনুপযোগী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারী পরিবার নিয়ে বসবাস করছে।