তালা প্রতিনিধি : ইউপি নির্বাচনে বিরোধিতার জের হিসেবে শ্লীলতাহানি ও মারপিটের ঘটনায় গুরুতর আহত সাতক্ষীরা তালার মেশারডাঙ্গা এলাকার কার্ত্তিক ব্যাণার্জীর স্ত্রী নমিতা ব্যানার্জী মারা গেছেন। প্রায় ৩ বছর চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তবে মামলা জটিলতায় ময়নাতদন্ত ও সৎকার ছাড়াই শুক্রবার থেকে বাড়িতেই তার লাশ পড়ে রয়েছে। গত ৩ বছরে মামলার পাশাপাশি তার চিকিৎসায় প্রায় নিঃস্ব পরিবারটি লাশের সৎকারের অনুমতি চেয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। কিন্তু আইনি জটিলতায় লাশের সৎকারে অপেক্ষা করতে হবে আজ রোববার আদালতের অনুমতি মেলা পর্যন্ত। অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৬ সালের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে এক নম্বর মেশারডাঙ্গা ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করেছিলেন কুলপোতা গ্রামের মৃত করুণাময় সানার ছেলে নিমাই পদ সানা। নির্বাচনে সেবার তিনি বিজয়ী হলেও মেশারডাঙ্গার মৃত প্রফুল্ল ব্যাণার্জীর ছেলে কার্ত্তিকসহ পরিবারের অন্যান্যরা অপর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। বিপত্তিটা সেখানেই। নির্বাচনের পরের দিন ২৩ মার্চ দুপুর ১২ টার দিকে নিমাই সানার নেতৃত্বে তার ভাই শিবপদসহ সত্যজিৎ মন্ডল, অভিজিৎ মন্ডল, প্রদীপ সরকার, কামনাশীষ মন্ডল, সুভাশীষ সরকার, বিশ্বদেব ব্যানার্জীসহ অন্তত ৩৫/৪০ জন দা, শাবল, কুড়াল ও লাঠিসোটা নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা কার্ত্তিককে না পেয়ে তার স্ত্রী নমিতা ব্যাণার্জী (৪০) কে শাবল দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তারা নমিতার পরণের শাড়ি ছিড়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। নমিতার চিৎকারে কার্ত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যাণার্জী, নমিতার মেয়ে মুক্তি ব্যাণার্জী (১৫) তাকে রক্ষার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাদেরকেও মারপিট ও শ্লীলতাহানি করে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা বাড়িতে লুটপাট শুরু করে। এ সময় তারা বাড়িঘর ভাঙচুর করে ঘরে থাকা ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে তালা ও পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনায় পরের দিন ২৪ মার্চ কার্ত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যাণার্জী বাদী হয়ে নিমাই পদ সানাকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনের নামে তালা থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে। এদিকে আহত নমিতার অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সর্বশেষ ভারত থেকে এনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৯ মে তাকে সেখান থেকে মেশারডাঙ্গা বাড়িতে নিয়ে আসলে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সর্বশেষ মামলা জটিলতায় এখন পর্যন্ত নমিতার লাশ বাড়িতেই পড়ে রয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত কিংবা সৎকারের অনুমতি দিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। আদালতের অনুমতি ছাড়া লাশের সৎকারের ব্যবস্থা করতে না পারায় প্রশাসনও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে এএসপি (সার্কেল) হুমায়ুন কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি মামলা জটিলতা থাকায় আদালতের অনুমতিতে সৎকার কিংবা ময়নাতদন্তের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে শুধুমাত্র নির্বাচনে সমর্থন না করায় মারপিট ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে প্রায় ৩ বছরেরও বেশি সময় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকেই আলীঙ্গন করতে হলো নমিতা ব্যানার্জীকে। মৃতের পরিবারের দাবি, এবার আর জীবন ফিরে পাবার আকুতি নয়, অন্তত লাশটি সৎকারের অনুমতি চান তারা। এ ব্যাপারে মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় ইউপি সদস্য নিমাই পদ সানার নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের লাশের বাড়িতে যাওয়ার কৈফিয়ৎ তলব করে এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে হুমকি প্রদান করেন। সর্বশেষ নমিতার নিথর দেহটি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রবিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টা পজন্ত মেশার ডাঙ্গা বাড়িতেই পড়ে ছিল।