কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : গৃহবধূ সোমা গাইন। প্রসব বেদনা উঠলে বুধবার রাত ৮টার দিকে খুলনা জেলার দাকোপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করানো হয়। কর্তব্যরতরা তাকে ভর্তি করেন। রাত ১২টার পর সোমা গাইনের তীব্র ব্যথা ওঠে। পাশে ডিউটিরত নার্সদের ডেকেও কোন সাড়া পাননি। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে অর্ধেক বাচ্চা বেরিয়ে আসে। চিৎকার শুনে তবেই নার্সরা ছুটে আসেন। তারপর তাকে নিয়ে যান। ওই রাতে কোন ডাক্তারও আসেননি এমন অভিযোগ নবজাতক শিশুর মায়ের। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার বাচ্চাকে মৃত ভেবে টেবিলের ওপর রেখে দেন। আমি তাদের বলি আমার বাচ্চা মারা যায়নি, ওর পা নড়তেছে। তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেয় না। মারা গেছে সিদ্ধান্তেই অনড় থাকেন। প্রায় তিন ঘন্টা পর শিশুটিকে ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলে। ঠিক তখনই শিশুটি কেঁদে ওঠে। ডাক্তার এসে তড়িঘড়ি করে খুলনা শিশু হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা ৩৫ মিনিটে খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নবজাতক শিশুটিকে খুলনা শিশু হাসপাতালের ৭নং ইনকিউবেটর মধ্যে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সময় মতো অক্সিজেন না পাওয়া ও ওজন কম থাকায় শিশুটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, শিশুটির অপুষ্টি ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। এছাড়া ওজন খুবই কম। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুটিকে বর্তমানে ইনকিউবেটরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাচ্চাটি এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়।
সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পারি ওই রাতে ৪ জন চিকিৎসকের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের ডেলিভারি হয়। রাতে চিকিৎসক ছিল বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে শনিবার বিস্তারিত সব জেনে প্রকৃত ঘটনা বলতে পারবো।
হাসপাতালের কিউবেটর এর দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, বাচ্চাটির ওজন ৮শ’ গ্রাম হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে তার ওজন খুবই কম। এছাড়া শ্বাসকষ্টও আছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমা গাইনের স্বামী দাকোপ উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের অফিস সহকারী পুরঞ্জন গাইন বলেন, ‘তার স্ত্রী সোমা গাইনের প্রসব ব্যথা উঠলে বুধবার রাত ২টার দিকে ডেলিভারির জন্য কেবিনে নেওয়া হয়। সেখানে সোমা গাইন এক পুত্র সন্তান প্রসব করেন। প্রসবের পর চিকিৎসক ও নার্স শিশুটিকে মৃত ভেবে টেবিলের ওপর কাপড় মুড়িয়ে ফেলে রাখেন। সকালে হাসপাতালের আয়া ফেলে দিতে গেলে কেঁদে ওঠে ওই নবজাতক।’
নবজাতক শিশুটি মা সোমা গাইন বলেন, ওই দিন ডাঃ সন্তোষ বাবু তাকে চিকিৎসা প্রদান করেন। তিনি তাকে রাতে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান।
খবর জানতে পেরে রোগীর অভিভাবকরা শিশুটিকে বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এদিকে, ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টির তদন্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পুরঞ্জন গাইন বলেন, এটাই আমাদের প্রথম সন্তান। তার স্ত্রী সোমা গাইন মোটামুটি সুস্থ আছেন। তবে শিশুটি এখনো আশঙ্কামুক্ত নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।