মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : মোংলা থানার ওসি/ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের বদলিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠেছেন বন্দর কেন্দ্রিক চোরাকারবারী চক্র। খুশিতে মিষ্টি বিতরণসহ চোরাকারী ও অপরাধীরা আবারও নেমে পড়েছেন পশুর নদীতে। শনিবার রাতে ‘ওসি’ আনুষ্ঠানিকভাবে চলে যাওয়ার পর তৎপর হতে শুরু করেছে চোরাকারবারীরা। সমুদ্র বন্দরে আগত বাণিজ্যিক জাহাজ ও বিভিন্ন নৌযান নির্ভর অপরাধীরা নতুন করে সংগঠিত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির শংকা রয়েছে।
জানা গেছে, মোংলা সমুদ্র বন্দরের বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌ পথে যাতায়াতকারী নৌযানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মেঘা প্রকল্প ঘিরে বিগত কয়েক বছর ধরে গড়ে ওঠে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্র।
চক্রের শক্তিশালী সদস্যরা বন্দরে আগত বিভিন্ন বিদেশী জাহাজ থেকে নদী পথে জ্বালানী তেল, মবিল, ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, মেশিনারিজ, রং, ব্যারেলসহ নানা ধরণের লোহা, ওয়ার রোপ, হাসিল (জাহাজ বাঁধার বড় রশি), ইলেকট্রনিক্স পণ্য, নানা ধরণের মাদক বিদেশী হুইস্কি, বিয়ারসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র অবাধে পাচারে জড়িত। কাষ্টমস, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বন্দর প্রহরীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারী চক্রের সদস্যরা দিনে রাতে দেদারচ্ছে এসব পণ্য পাচার করায় একদিকে সরকার হারাতো মোটা অংকের রাজস্ব। অপরদিকে তাদের অপতৎপরতায় বর্হি:বিশ্বে বন্দরের সুনাম নষ্ট হতে থাকে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মোংলা বন্দর কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা দেশী-বিদেশী তেল পাচারকারী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা রাতের অন্ধকারে প্রতিনিয়ত বিদেশী জাহাজ ও কার্গো থেকে তেল পাচার করতো। চোরাচালান বা চোরাকারবারীদের দমন করতে পুলিশ, কোষ্টগার্ড, নৌ-বাহিনীসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠে। তারপরও মোংলা বন্দরে চোরাকারবারীদের সাথে রয়েছে একটি প্রভাবশালী গ্রুপ। তারা মুলত এ তেল পাচারের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত রয়েছে।
এ অবস্থা হতে উত্তরণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার। পুলিশের একের পর অভিযান ও তৎপরতায় ওই চক্রের বেশ কয়েকটি চালানও আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ থাকে চোরাকারবারী চক্রের তৎপরতা। কিন্তু মোংলা থানার ওসি মনিরুল ইসলামের হঠাৎ বদলী ও শনিবার রাতে তিনি চলে যাওয়ার খবরে চোরাকারবারী চক্রের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন স্পটে উচ্ছ্বাস প্রকাশ ও মিষ্টি বিতরণ করেন। আর রাতেই নেমে পড়েন চোরাচালানী তৎপরতায়। রবিবার সকাল থেকে সেই সকল চোরাকারবারীদের আস্তানায় একের পর এক আসছে চোরাচালানী পণ্যও।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, মোংলা বন্দর কেন্দ্রীক চোরাকারবারীদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা। চোরাচালানীদের অপতৎপরতা দমনে নজরদারী ও অভিযান বৃদ্ধির পাশাপাশি আগের তুলনায় কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।