আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : মোংলায় তরল পানীয় বিষক্রিয়ায় সাড়ে ৪ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুর পিতা-মাতার অভিযোগ সৎমা ট্যাং শরবতের সাথে বিষ জাতীয় (বিষাক্ত) পানীয় (কীটনাশক) মিশিয়ে খাইয়ে তাদের শিশু কন্যাকে মেরে ফেলেছে।
এলাকাবাসী ও নিহত শিশুর পিতা-মাতা জানান, শহরতলীর সিগনাল টাওয়ার এলাকার ভাড়া বাড়ীতে ভাঙ্গরী (পুরাতন মালামাল ক্রয়-বিক্রয়) ব্যবসায়ী ইসলাম সরদার (৪২) তার বড় স্ত্রী আলসুম বেগম, বড় স্ত্রীর মেয়ে সোনিয়া (৪ বছর ৭ মাস) ও ছোট স্ত্রী শাহানাজ আক্তার সাথীকে নিয়ে সপ্তাহখানেক ধরে একই সাথে বসবাস করে আসছিলেন। বুধবার রাতে বড় স্ত্রীর মেয়ে সোনিয়াকে ছোট স্ত্রী চড় দেয়ার ঘটনায় ছোট স্ত্রীর সাথে স্বামী ইসলামের ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়াকে কেন্দ্র করেই মুলত ছোট স্ত্রী তার বড় স্ত্রীর মেয়েকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কৌশলে খাবার খাওয়ানোর পর ট্যাংয়ের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছে বলে জানিয়েছেন শিশুর মা আলসুম বেগম। নিহত সোনিয়ার মা আলসুম বলেন, আমি রাজমিস্ত্রীর যোগালীর (সহযোগী) কাজ করি আর সোনিয়ার পিতা ইসলামও ভাঙ্গরী (পুরাতন মালামাল ক্রয়-বিক্রয়) ব্যবসা করেন। তাই মেয়েটি বাড়ীতে একা থাকতো। তার সতীন (ছোট স্ত্রী) আলাদাভাবে দিগরাজ বসবাস করতো। মেয়েটি দেখাশুনার জন্য ছোট বোনের মত ভেবেই ওকে (সতীন) আমাদের এখানে নিয়ে আসি। এখানে আসার বিভিন্ন সময়ে সামান্য বিষয়ে ঝগড়া ফ্যাসাদের জের ধরে আমি ও আমার স্বামীর উপর রাগ করে আমার মেয়েটিকে ট্যাংয়ের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছে। দুপুরে যখন মেয়েটিকে বিষ খাওয়ায় তখন বাড়ীতে সতীন সাথী আর তার মেয়েটি ছাড়া কেউ ছিল না। বিষ খাওয়ানোর পর মেয়েটি গলায় ব্যথা বলে কান্নাকাটি শুরু করলে বিকেল ৩টার দিকে আশপাশের লোকজন তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর খবর পেয়ে আমি ও আমার স্বামী হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে সন্ধ্যায় পৌনে ৮টার দিকে সোনিয়া মারা যায়। সোনিয়া মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সিগনাল টাওয়ার এলাকা থেকে হাসপাতালে আসা লোকজন বলেন, মেয়েটাকে তার সৎ মা বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: সুদীপ বালা বলেন, বিষক্রিয়ার ফলে শিশু সোনিয়া মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হাসপাতালে আসার পর মেয়েটি গলায় হাত দিয়ে জোরে জোরে কান্নাকাটি করছিল। মুখ থেকে গ্যাজাও বের হচ্ছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশ রাতে হাসপাতালে গেলেও মারা যাওয়া শিশুর পিতা-মাতা ও স্থানীয় লোকজন সৎমা বিষ খাইয়ে মেরেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও অজ্ঞাত কারণে সৎমা সাথীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও হলেও আটক না করায় লোকজনকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে মোংলা থানার এসআই সনজিৎ বলেন, শিশুটি গলায় ব্যথা বলে কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তার নানী তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে হাসপাতালে মারা যায়। নানানজন নানা কথা বলছে আসলে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না।