মোংলায় দুই প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা দুই ইউপি মেম্বারের পেটে

প্রকাশঃ ২০২২-০৬-০২ - ২২:৫৯

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ একদিকে শিক্ষক অন্যদিকে আবার ইউপি মেম্বার। দুইজনই নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারী বেতন-ভাতাও নেন দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই। তবে এ সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের আইনের পরিপন্থি এমন নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু সেই আইনকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন মোংলা উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের দুই মেম্বার। একজন চাঁদপাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার শফিকুল ইসলাম। তিনি আবার উপজেলা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক। সেখান থেকে সরকারীভাবে ভাতা নেন ৪ হাজার টাকা আর চাঁদপাই ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি মেম্বর হিসেবে ভাতা নেন ১০ হাজার টাকা। দীর্ঘদিন এই বেতন-ভাতা ভোগ করে আসছেন তিনি।
অন্যজন হলেন মিঠাখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বর প্রণব কুমার মজুমদার। তিনিও মেম্বর হিসেবে ভাতা নেন ১০ হাজার টাকা। আর একই সাথে চাঁদপাই মেছেরশাহ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে বেতন নেন ২২ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মোংলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস,এ আনোয়ার উল কুদ্দুস ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত কুমার পোদ্দার বলেন, এমপিওভুক্তি (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) কোন মাদ্রাসা বা স্কুল কলেজের শিক্ষক যদি জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন, তাহলে সে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ইউনিয়ন পরিষদের এক জায়গা থেকে সরকারী বেতন-ভাতা নিতে পারবেন। যদি ইউপি মেম্বার শফিকুল ইসলাম ও প্রণব কুমার মজুমদার দুই জায়গা থেকে বেতন-ভাতা নিয়ে থাকেন তাহলে এ পর্যন্ত যা নিয়েছেন তা যে কোন এক প্রতিষ্ঠানের সরকারী কোষাগারে তাদেরকে তা ফেরৎ দিতে হবে।
চাঁদপাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা তারিকুল ইসলাম বলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে শফিকুল ইসলাম মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা নিচ্ছেন।
ইউপি মেম্বর হিসেবে ১০ হাজার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক হিসেবে ৪ হাজার টাকা করে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন মেম্বর শফিকুল। তিনি বলেন, দুই জায়গা থেকে যে বেতন-ভাতা নেয়া যাবেনা এটা আমার জানা নেই। এদিকে ইউপি মেম্বার শফিকুল ইসলাম তার নির্বাচনী হলফনামায় পেশা শিক্ষক উল্লেখ না করে ব্যবসা বলে উল্লেখ করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শফিকুল ইসলাম তথ্য ফাঁকি দিয়ে অন্যায় করেছেন। অন্যদিকে মিঠাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রণব কুমার মজুমদার নির্বাচিত হওয়ার পর ১০ হাজার টাকা ভাতা নিয়েছেন বলে ইউপি চেয়ারম্যান উৎপল কুমার মন্ডল জানিয়েছেন। একই সাথে ২০০১ সাল থেকে চাঁদপাই মেছেরশাহ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে এ পর্যন্ত ২২ হাজার টাকা করে বেতন নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে মেম্বার প্রণব কুমার মজুমদারের ০১৯১২ ৭৪৫১৪৬ নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তারপরও দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ওই দুই জনপ্রতিনিধি দুই জায়গা থেকেই নিয়মিত সরকারী বেতন-ভাতা নিয়ে আসছেন তা আমার জানা ছিলনা। আইন না মেনে অনৈতিকভাবে রাজস্ব তহবিল ও স্কুল-মাদ্রাসা থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।