যশোর : যশোরে প্রতারনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সোহল রানা ও মিজানুর রহমান নামে তিয়ানসি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের দুই কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে কোতয়ালী থানার পরিদশক (ইন্টেলিজেন্ট এন্ড কমিউনিটি পুলিশিং) তোফায়েল আহম্মেদ শহরের ঘোপ জেল রোডের তিয়ান সি বাংলাদেশ কোম্পানির যশোর অফিস থেকে তাদের আটক করেন। সোহল রানা ওই কোম্পানির অফিস ইনচার্জ। তিনি ঝিনাইদাহ জেলার কোটচাদপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের জালাল শেখের ছেলে। আর মিজানুর রহমান একই কোম্পানির ডিষ্টিবিউটর এবং ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার গোয়াল হুদা গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।
প্রতারনার শিকার সাতক্ষিরা তালা থানার হাজরাকাঠি গ্রামের সামাদের ছেলে আরিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমিসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রতারনা করে তিয়ানসি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের বিভিন্ন প্রডাক্ট দিয়ে প্রায় অর্ধশত কোটে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি জমি বিক্রি করে একলাখ টাকা এবং ব্রাক সমিতির থেকে লোন তুলে আরো ৫০ হাজার মোট দেড় লাখ টাকা সোহেল রানাকে দিয়েছি। টাকা দেওয়ার সময় আমাকে একটি বিসিএম ম্যাশিন ও তিনটি বেসলেট দিয়েছিলেন। তখন সোহেল রানা আমাকে বলেছিলেন আরও দুইজন লোক আনলে প্রতি মাসে মুনাফার টাকা পাবো।’
‘জমি বিক্রি করে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা কোম্পানির ডিষ্টিবিউটর মিজানুর রহমানকে দিয়েছি। টাকা দেওয়ার সময় কিছু ঔষধ ও তিনটি বেসলেট দেয়। তুমি আর দুইজন লোক আনো। প্রতিমাসে মাসে টাকা পাবেন। এভাবে ৫-৬ শত লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানালেন প্রতারণার শিকার খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার কওসার মোড়ল।
প্রতারনার শিকার আরেকজন যশোর চৌগাছা উপজেলার পুড়োপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী সাবেনা বেগম। তিনি বলেন, আমি লিবার জনিত রোগে আক্রান্ত। গরু বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। বিনিময় আমাকে দুই তিনটি ঔষধ দিয়েছে এবং অফিস থেকে আমাকে বলেছে দুইজন লোক জোগাড় কর মাসে মাসে টাকা পাবা। আমার সাথে এরা প্রতারনা করেছে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলার মহেশপুর থানার সাবদালপুর গ্রামের আসাদুলের মেয়ে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বাবা রাজমিস্ত্রীর কাজ করে বহু কষ্ট করে ৫০ হাজার টাকা জোগায় করে এই কোম্পানিকে দিয়েছি। এরা আমা সাথে প্রতারনা করছে।’
যশোর উপশহরের বি-ব্লাকের হাজি নুর মোহাম্মাদের ছেলে মিজানুর রহমান বলেছেন তিনি এই কোম্পানিতে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারনার শিকার হয়েছি।
যশোর বাঘারপাাড় উপজেলার ওমলপুর গ্রামের রিয়াজুলের স্ত্রী হালিমা বেগম দিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা, যশোর শহরের ঝুমঝুমপুরের নুর ইসলামের ছেলে রাজিব ১৫ হাজার, ঝিনোইদাহ জেলার মহেশপুর থানার লুৎফর রহমানের স্ত্রী বিলকিস ২৫ হাজার দিয়ে প্রতারনা শিকার হয়েছে। এভাবে প্রায় শতাধিক লোক অভিযোগ করেছেন।
যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার পরিদশক (ইন্টেলিজেন্ট এন্ড কমিউনিটি পুলিশিং) তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘তিয়ানসি নামে একটি কোম্পানির যশোর অফিসে শত শত লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে শতাধিক নারী পুরুষ আমার কাছে অভিযোগ করেন তাদের তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি অফিসের দুই কর্মকর্তাকে আটক করে থানায় এনেছি।’ পরে ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত পাবার আশায় থানায় ভিড় জমায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছিল।
এদিকে তিয়ানশি যশোর অঞ্চলের গোল্ড লায়ন বদরুল আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।