যশোর প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে ইলিয়াস হোসেন নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় প্রেমিকাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের দাবি ইলিয়াসকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত প্রেমিকা ও তার পিতা। পুলিশ বলছে হত্যাকান্ড সন্দেহে প্রেমিকা লিয়া খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আর লাশ উদ্ধার করে যশোর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য জন্য পাঠানো হয়েছে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর ফারুক হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে ইলিয়াস হোসেনের সাথে প্রতিবেশী আয়নাল হকের মেয়ে ও কমার্সের এইচএসসি পরীক্ষার্থী গঙ্গানন্দপুর ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী লিয়া খাতুন হীরার সাথে তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। পরিবারের লোকজন বিষয়টি মেনে নিচ্ছিলো না। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আকস্মিক লিয়া খাতুন ফোন করে ইলিয়াসের আত্মহত্যার খবর তার মামাতো ভাই ইয়াসিনকে জানায়। ফোন পেয়ে ইয়াসিন নামে ওই তরুণ লিয়ার বাড়ির জানালার পাশে গিয়ে ইয়াসিনের মৃতদেহ দেখতে পায়। তবে মৃতের গলায় দড়ি বা কোনকাপড় পাননি। এরপর ইলিয়াসের বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মাকে মৃত্যুর খবর জানায় ইয়াসিন। ইলিয়াসের পিতা ও চাচাদের অভিযোগ তাদের সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আমিনুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি ইলিয়াসের সাথে তার প্রতিবেশী লিয়ার তিন বছর ধরে প্রেম চলছিলো। তাদের প্রেম মেয়ের পরিবার থেকে মেনে নিচ্ছিলো না। আজকে ছেলেটির লাশ পাওয়া গেছে। এটা যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে তবে জড়িতদের বিচার দাবি করছি। অন্যথায় মেয়ের পরিবারকে কোন প্রকার যাতে হয়রানি না করা হয় দাবিও থাকবে পুলিশের প্রতি।
নিহতের মামাতো ভাই ইয়াসিন বলেন, লিয়া আমাকে রাত ৩ টা ১৪ মিনিটে ফোন দিয়ে জানাই ইলিয়াস ভাই আত্মহত্যা করেছে। আমিও আমার এক বন্ধু লিয়ার বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখি সে ইলিয়াসের মাথার পাশে বসে কাঁদছে। এ সময় ইলিয়াস ভাইয়ের শরীরে কাপড় বা দড়ি কোন কিছুই দেখতে পাইনি।
নিহতের পিতা ফারুক হোসেন জানান, ছেলে কখন রিয়ার সাথে দেখা করতে গেছে আমরা কিছুই জানি না। রাতেই ইয়াসিন এসে খবর দেয় যে সে মারা গেছে। খবর পেয়ে আমরা লিয়াদের বাড়িতে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে ছেলের নিথর দেহ দেখতে পাই। লিয়া ও তার বাবা-মা পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনায় মামলা করবো। আমি ন্যায় বিচার চাই।
নিহতের চাচা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার ভাইপোকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। লিয়া ও তার মা-বাবাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটিত হবে।
অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত প্রেমিকা লিয়া ও তার পিতা।
লিয়ার পিতা আয়নাল হক বলেন, আমরা এর কিছুই জানি না। রাতে কান্নাকাটি শুনি। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি ইলিয়াসকে নিয়ে তার বাবা মা কান্নাকাটি করছে।
লিয়ার দাবি পরিবারের লোকজনের সম্মতি না থাকায় সে ইলিয়াসের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে। যে কারণে ইলিয়াস তার সাথে দেখা করতে আসে। সে আমাকে জানায় সম্পর্ক না রাখলে সে আত্মহত্যা করবে। এক পর্যায়ে আমার গলায় থাকা ওড়না ছিনিয়ে নেয়। এরপর গ্রিলের সাথে ওড়না বেধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে। আমি ভিতর থেকে নানাভাবে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ কাইচি দিয়ে ওড়না কেটে দেই। এরপর ওর ফোন দিয়ে ইয়াসিনকে ডেকে আনি। ইলিয়াস আত্মহত্যা করেছে। আমার বিরুদ্ধে যে হত্যার অভিযোগ না হচ্ছে তা মিথ্যা।
এদিকে খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ড সন্দেহে প্রেমিকা লিয়া খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত।তিনি বলেন, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পরেই বোঝা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। হত্যাকাণ্ড হলে এ ঘটনায় জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের মামলা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, নিহত ইলিয়াস হোসেন চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।