যশোর : যশোরের বড়বাজার কেন্দ্রিক চকলেট-পটকাবাজি ও অবৈধ ভারতীয় কসমেটিক্স চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম যেন থামছেই না। প্রশাসনের চোখের সামনেই কাউকে তোয়াক্কা না করে জোরেসোরেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কারবার। কালীপূজাকে সামনে রেখে এই চোরাকারবারীরা তাদের টার্গেট নির্ধারণ করেছে ১০ কোটি টাকা বাণিজ্যের। এজন্য পুলিশসহ প্রশাসনকে ম্যানেজে উঠে পড়ে লেগেছে তাদের মনোনিত কয়েকজন সোর্স। কালীপুজায় নতুন টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে ২০ সদস্যের এই চোরাকারবারী দলটি।দেশ পরিবর্তনের ধারায় নতুন সরকার চ্যালেঞ্জ নিলেও অসাধু কয়েকজন প্রশাসনের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে যশোর সদর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জসিম তাদেরকে ব্যবসা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে। তিনি নাকি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিবেন।
যশোরে এই চকলেট-পটকাবাজি ও অবৈধ ভারতীয় কসমেটিক্স বিকিকিনির বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে অঞ্জন সাহা ও সিহাবের নেতৃত্বে সেলিম-মিম-আরজু সিন্ডিকেটের ২০ জন চোরাকারবারি।
এর মধ্যে যশোরের গোহাটা রোড, হাটচাঁদনী মার্কেট ও বড় বাজার এলাকায় অঞ্জন সাহা ও সিহাবের নেতৃতে সেলিম-মিম, সাকিব, নূর ইসলাম, সানি চুড়িপট্টি, নাদিম, মতিন, মিন্টু, রহমান (পুলিসের সোর্স), বরিশাল আমির, কালু, খোকন, শহিদুল, মহিউদ্দিন, সাত্তার, জাফর মাস্টার, ইকমল, লালন পারভেজ, আরজু দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় কসমেটিক্স এবং চকলেটবাজি ও বিস্ফোরক ব্যবসার সাথে জড়িত।
এই সিন্ডিকেটটি চকলেট-পটকাবাজি, বাজির মসল্লা, বিভিন্ন কসমেটিক্সএর সাথে নিষিদ্ধ ভারতীয় মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, কাজু বাদাম, কিসমিস, জিরা, বিস্কুট, চকলেট, আগরবাতী, পোষাক ও কম্বল অবৈধপথে ট্রেন অথবা পরিবহন যোগে যশোরে নিয়ে আসছে ও মজুদ করছে। যা দেশের বিভিন্ন বাজারে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়ে থাকে।
আগত কালীপুজা উপলক্ষে এরা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় কসমেটিক্স, চকলেটবাজি ও পটকা তৈরির মসলা আনছে। চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার সেলিম সিন্ডিকেট বড় বড় চালান নিয়ে এসে যশোর স্টেশন এলাকায় মাল রেখে ব্যবসা চালাচ্ছে। মিম মাল এনে মজুদ করেছে তার বারান্দিপাড়া কদমতলার আস্থানায়, আরজু তার বকচরের ডেরায় মাল রেখে অর্ডার অনুযায়ী বাজারে ঢোকাচ্ছে। তালবাড়িয়া স্টোরের আবু তালেবও এই পটকাবাজি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে কমিউটার ট্রেনসহ নানা মাধ্যম। চোরাকারবারিরা ‘বেতনা এক্সপ্রেস’ ও ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে অনায়াসে পণ্য পরিবহন করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের চোখের সামনে এসব কর্মকাণ্ড চললেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে উপরি আয়ের ধান্ধায়। ট্রেনে কোনো তল্লাশি চালানো হয় না। এছাড়া বেনাপোল থেকে যশোর,খুলনা কোথাও চেকপোস্ট নেই। নেই বিজিবি বা পুলিশের পাহারা। ফলে চোরাকারবারিরা বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া বেতনা ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিকে মালামাল পাচারের নিরাপদ বাহন হিসাবে ব্যবহার করছে। এরমধ্যে আবার নির্দিষ্ট থানা পার হতে দালালদের টাকাও দিচ্ছে এসকল চোরাকারবারিরা।
এসব ট্রেনে কম্বলের সঙ্গে চকলেট-পটকাবাজি, মাদক, থ্রি-পিস, চকলেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, ইমিটেশন গহনা, সিগারেট, মোবাইল, কাপড়, কিসমিস, নিম্নমানের চা পাতা, আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধসহ বড় বড় চালান নির্বিঘ্নে যশোর-খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
একইভাবে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা শহর ও শহরতলীর পলাশ হোটেলের নীচে, আলু পট্টির মিলনের চায়ের দোকানের পিছনে, মাছবাজার এলাকা, যশোরের গোহাটা রোড, হাটচাঁদনী মার্কেটসহ বড় বাজার এলাকায় বিভিন্ন গোডাউনে মালামাল রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই চক্রের কয়েকটি দোকানে মহিলা পুরুষ চোরাকারবারীদের আনা গোনা দুপুরের পর তেকে রাত আট পর্যন্ত চলতেই থাকে।
যশোরের চৌগাছার মাসিলা, পুড়াপাড়া, শাহজাদপুর, শার্শা, বেনাপোলের শালকোনা, গাতীপাড়া, পুটখালী, সাদীপুর, বড় আঁচড়া, ছোট আঁচড়া ও সাতক্ষীরার কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে সিন্ডিকেটের চকলেট বোমা ও বিস্ফোরক চোরাচালান হয়ে থাকে।
এ সিন্ডিকেটের নির্দিষ্ট কমিশনভোগি কয়েকজন চোরাকারবারী চকলেটবাজি ও বিস্ফোরক আনা নেয়ার সাথে জড়িত রয়েছে। মালামাল নির্দিষ্ট ডেরায় পৌঁছানোর পর হাত বদল হয়। মালামাল নড়াইল, লোহাগড়া, ফরিদপুর, টেকেরহাট, ভাঙ্গা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ঢাকার চকবাজার ও নবাব-পুরে পাঠানো হয়।
এই অবৈধ মালামাল পরিবহনে যাতে কোন প্রকার ঝুট ঝামেলা না হয় সে কারণে চোরাকারবাদিদের সহযোগিতা করতে অঞ্জন সাহা, সাকিব, নুর ইসলাম ও সিহাব প্রশাসনসহ সকলকে ম্যানেজ করতে প্রতি কার্টুন একশত টাকা করে আদায় করে থাকে। সুত্র জানিয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে বিভিন্ন ভাবে ১২০-১৫০ কার্টুন মালামাল শহরের বাইরে যায়।
এসব এলাকার ব্যবসায়ীর সাথে মোবাইল ফোনে চুক্তির পর সুন্দরবন, এসএ পরিবহন, আফজাল, রেইনবো, সোনারগাঁ ট্রান্সপোর্টে মালামাল বুকিং দেয় তারা। এক্ষেত্রে কার্টনের গায়ে লেখা থাকে মাল ফেরৎ। ভুয়া ক্যাশ মেমো ও ভুয়া দোকানের নাম সংযুক্ত থাকে। রাস্তায় প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করে সিন্ডিকেট। যশোরে চকলেট ও পটকাবাজি বিকিকিনি বন্ধে পুলিশের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ কসমেটিক্স এবং পটকাবাজির বিষয়ে তারা খোঁজখবর নিয়েছেন। চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে শিঘ্রই অভিযান চালানো হবে। অবৈধ ব্যবসায়িদের কাউকে কোন ছাড়া দেওয়া হবে না।