যশোর : যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গাইদগাছি গ্রামে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাত ঘোষণা দিয়ে মাসুদ রানা (৩৫) নামে এক ব্যবসার্য়ীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা এবং আরো ৫জনকে জখমের ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের মা কেফায়েতনগর গ্রামের খাদিজা বেগম (৫৫) গত শুক্রবার রাতে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন।
আসামিরা হলো, সদর উপজেলার গাইদগাছি (তেরঘর,ফুলবাড়ি) গ্রামের আবুল হাসানের ছেলে বাবু (৩৫), অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ বনগ্রামের আজিজুর রহমান আইজের ছেলে মুরাদ হোসেন (৩২), প্রেমবাগ কাটাখাল পশ্চিমপাড়ার হাফিজুর রহমানের ছেলে শিমুল হোসেন শান্ত (২৫), শওকত আলী মোল্লার ছেলে আল-আমিন (২৭), প্রেমবাগ গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাজু (২৮) এবং সদর উপজেলার গাইদগাছি দক্ষিণপাড়ার নুরুর ইসলাম নুরুর ছেলে পিন্টু (৩২)।
এজাহারে খাদিজা বেগম উল্লেখ করেছেন, তার ছেলে মাসুদ রানা কাঠের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতো। অভয়নগরের প্রেমবাগ সুপারি বাগান জামে মসজিদের গ্রিল চুরি করাকে কেন্দ্র করে তার ছেলে মাসুদ রানার পরিচিত গাইদগাছি গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বসবাসকারী জুলফিকারকে (৩০) আসামিরা দোষারোপ করে। এই নিয়ে তাদের দুইজনের সাথে আসামিদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে জুলফিকারকে তার শ্বশুরবাড়িতে যেতে বাঁধা দেয় আসামিরা। গত ২৩ আগস্ট জুলফিকার তার (মাসুদ রানার) বাড়িতে যায়। পরে খাওয়া শেষ করে তার ছেলে মাসুদ রানা, মণিরামপুর উপজেলার সুবোলকাঠি গ্রামের মুনসুর আলী বিশ্বাসের ছেলে ইসরাফিল হোসেন (১৯), করেরাইল গ্রামের শামীমের ছেলে সজিব মোল্লা (১৯), আলমগীর হোসেনের ছেলে সুমন হোসেন (১৯) এবং বারপাড়া গ্রামের বাবুল গাজীর ছেলে মঈন উদ্দিন (১৯) ওই রাতে গাইদগাছি গ্রামে যায়।
বিষয়টি বুঝতে পেরে রাত দেড়টার দিকে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জুলফিকারের শ্বশুর বাড়িতে ঢোকে এবং লাঠি সোটা ও কুদারের আচারি দিয়ে তাদের মারপিট করে। ওই ৬জনকে টেনেহিচড়ে ঘরের বাইরে বের করে। এরপর স্থানীয় মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষনা দিয়ে লোক জড়ো করে। এবং গণপিটুনি নিয়ে জখম করে ওই গ্রামের ফিরোজ আহমেদের ভ্যানে করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পথিমধ্যে রাত ৩টার দিকে আসামিরা কাটাখাল নামক স্থানে গিয়ে ওই ৬জরকে ভ্যান থেকে নামিয়ে নেয়। সেখানে গিয়ে মাসুদ রানাকে ফের মারপিট এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে আসামিরা চলে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় মাসুদ রানা। বাকি ৫জন আহত হয়। পরে তাদের অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
সংবাদ পেয়ে মাসুদ রানার চাচা শহিদুল ইসলাম হাসাপাতালে গিয়ে মাসুদ রানার মরদেহ দেখতে পান। তিনিও হাসপাতালে গিয়ে তার ছেলে লাশ দেখতে পান। বাকি ৫জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। জুলফিকার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসা এবং তাকে মাসুদ রানাসহ অন্যান্যরা নিয়ে আসায় আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়। পরে ডাকাত নাটক সাজিয়ে ওই ৬জনকে গণপিটুনি দেয়। এবং পরে আহত মাসুদ রানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
এই বিষয়ে বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘটনার দিন শিমুল হোসেন শান্তকে একটি বার্মিজ চাকুসহ আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৫দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে আদালতে। ছাড়া এই ঘটনার শিকার ইসরাফিল, সজিব, সুমন ও মঈনউদ্দিন এবং ভ্যান চালক ফিরোজ শনিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত এই মামলার সাক্ষি হিসাবে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে।