রবিউল ইসলাম মিটু, যশোর : যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের অবহেলায় এক অজ্ঞাত মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বেড থেকে তাকে হাসপাতালের অভারব্রীজের নিচে বারান্দায় ফেলে রেখে গেছে। সেখানে তার করুণ মৃত্যু ঘটেছে। এ হৃদয়বিদারক ঘটনায় হাসপাতালের কারও কোন সন্তোষকজনক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় লোকজন ও হাসপাতালের রোগীদের স্বজনরা জানান, শনিবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে অভার ব্রীজের নিচে রাস্তার পাশে বারান্দায় সাদা গেঞ্জি এবং লাল সেলোয়ার পরিহিত অজ্ঞাত মহিলা (৫০) মরে পড়ে আছে। এরপর হাসপাতালের কর্মচারী ডোম লক্ষণ ওই মহিলার লাশ উদ্ধার করে জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। জরুরী বিভাগের ডাক্তার কল্লোল কুমার সাহা তাকে মৃত ঘোষণা করে মর্গে প্রেরণ করেন। তবে হাসপাতালের আনার ৩-৪ ঘন্টার আগে অথবা ভোরের দিকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি ধারণা সূত্রে জানান।
মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দায় রোগীর স্বজন শহরের বেজপাড়া আনসার ক্যাম্প এলাকার তাজুল ইসলামের স্ত্রী নুরুন্নাহারসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দায় অজ্ঞাত ওই মহিলা শুয়ে ছিলেন। এসময় মেডিসিন ওয়ার্ডের দুইজন আয়া তাকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভারব্রীজের নিচে রেখে আসেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই রাতে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে আয়া হিসেবে দায়িত্বপালন করেন রোজিনা এবং প্রতিমা। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডেও আয়া আয়েশা বেগম জানান, গত ৭/৮দিন আগে অজ্ঞাত ওই মহিলা রান্দায় শুয়ে থাকতে দেখেন। কারা যেন রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের ওভারব্রীজের নিচে রেখে আসে এবং ভোরে তার মৃত্যু হয়েছে।
মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স হোসেনে আরা জানান, ১০-১২দিন আগে ওই মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল। তার কোন স্বজন না আসায় তার পরিচয় বের করা সম্ভব হয়নি। কয়েকদিন আগে ডাক্তার তাকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তার কোন স্বজন না থাকায় তিনি ছাড়পত্র দেওয়ার পরও ওয়ার্ডের বারান্দায় ছিলেন।হাসপাতালের রেজিষ্টারে ছাড়পত্রের কথা উল্লেখ থাকলেও তিনি তা দেখাতে পারেনি। শনিবার সকালে ডিউটিতে এসে তাকে আর তিনি দেখেননি। দুপুরে শুনছি ওই মহিলা মারা গেছেন।
মহিলা ওয়ার্ডের আয়া রোজিনা এবং প্রতিমা রাতে দায়িত্বপালন করায় শনিবার দুপুরে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
আব্দুল করিম নামে জনৈক রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতালের কর্মচারী,নার্স ও ডাক্তারের অবহেলায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তার তাকে ছাড়পত্র না দিয়ে আরও কয়েকদিন চিকিৎসা দিলে হয়তো তিনি ভাল হয়ে যেতো।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার একেএম কামরুল ইসলাম বেনু বলেন, নার্স এবং ডাক্তারের অবহেলায় অজ্ঞাত মহিলার মৃত্যু হয়েছে এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে তার জানা নেই।
কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) আবুল বাসার বলেন, ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় কারও মৃত্যু হয়েছে এরকম ঘটনা তার জানা নেই দাবি করে বলেন, যদি এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।