“যা দেখি তাই লিখি পঁচা ভোটের কদর বেশী”

প্রকাশঃ ২০১৯-০৩-২১ - ১৭:০৫

আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : দেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধীন শক্তিশালী প্রথমস্থর এবং নিম্নস্থরের প্রথম বিচার আদালত ইউনিয়ন পরিষদ। যেটি গ্রাম পর্যায়ে বসবাসরত মানুষের শান্তি শৃংক্ষলা রক্ষা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রথম ও প্রধান মাধ্যম। আমাদের মত গ্রাম ভিত্তিক দেশে সুশাসন এবং সুষম উন্নয়ন তরান্বিত করতে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকর দায়িত্বশীল কর্ম তৎপরতা অপরিহার্য্য। সম্প্রতি দাকোপের একটি ইউনিয়ন পরিষদে চলমান গ্রাম আদালতের প্রশ্নবিদ্ধ বিচার প্রক্রিয়া দেখে আমি শুধু হতভাগ নয়, বরং সেখানে অপরাজনীতির চর্চা দেখে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাকে উদ্বিগ্ন হতে বাধ্য করেছে। সেখানে একটি মৎস্য ঘেরের বৈধ স্বত্ত্বদখল নির্নয় নিয়ে বিচার কার্য চলছিল। বিচার কার্য্যরে এক পর্যায়ে বিচারক প্যানেলের এক দায়িত্বশীল সদস্য নির্বাচীত জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে বিচার আদালতে বিবাদী পক্ষের একজনের রাজনৈতিক পরিচয় (বিএনপি সমর্থক) বার বার উল্লেখ করে বলেন এই সময়ে সে কিভাবে ন্যায় বিচার আশা করে। উত্তেজিত হয়ে বিষ্ফোরক মন্তব্যটি এতটাই কঠিন ছিল যে, বিপরীত রাজনৈতিক সমর্থক হওয়ায় তার নাগরিকত্ব এবং ন্যায় বিচার পাওয়ার যেন অধিকার নেই। এক পর্যায়ে নীরবতা ভেঙে আমি ওই কথাটির তীব্র প্রতিবাদ করে জানতে চাইলাম, যে বিষয় নিয়ে বিচার হচ্ছে তার সাথে রাজনৈতিক পরিচয়ের সম্পর্ক কি ? একজন বিচারক হয়ে তিনি বিচার আদালতে বসে এমন মন্তব্য করতে পারেন কিনা ? আমার প্রশ্নে প্যানেলের অন্য বিচারকদের হস্তক্ষেপে তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসলে ঘটনাটি সেখানে থেমে যায়। দাকোপসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রাম আদালতে বিচারকদের বিরুদ্ধে এমন রাজনৈতিক রঙ লাগানো বিচার কার্য্যরে কথা প্রতিনিয়ত শোনা যায়। এমন ঘটনায় ন্যায় বিচার যেমন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি তৃনমুল পর্যায়ে বাড়ছে জাতি ধর্ম এবং রাজনৈতিক বিভেদ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় দাকোপে ও চলছে নিরুত্তাপ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারনা। আগামী ৩১ মার্চের ভোটকে সামনে রেখে চলছে প্রার্থীদের তৎপরতা। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীর বিজয় যখন সুনিশ্চিত মনে করা হচ্ছিল তখন হাইকোর্টের রায়ে মনোনয়ন ফিরে পেয়ে মাঠে এসেছেন আওয়ামীলীগের (বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র এক প্রার্থী। যে কারনে নিরুত্তাপ ভোটে কিছুটা হলেও উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে আওয়ামী ঘরানার ভোট এখন দু’ভাগে বিভক্ত হবে। সঙ্গত কারনে জয়পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে নির্বাচন বিমুখ ওই গ্রাম আদালতের ভৎর্সনার পঁচা সরকার বিরোধী সমর্থক ভোট বা ভোটার। পরিস্থিতির বিবেচনায় এখন পঁচা ভোটের কদর অনেক বেশী। সব পক্ষ এখন ঘৃনিত পঁচা ভোটারদের কাছে টানতে এবং যে কোন মুল্যে তাদেরকে কেন্দ্রে আনতে মাঠে নামবেন। ইতিমধ্যে তেমন পূর্ভাবাস ও পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাম বাংলার একটি প্রবাদ বাক্য আছে, “ঝড়ে আম পড়লে ফকিরের কেরামতি বাড়ে”। প্রতিদ্বন্দিতাহীন নিরুত্তাপ ভোটের আভাষে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সরকার সমর্থক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচীত হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ সমর্থিত একজন, অন্য একজন আওয়ামী ঘরানার। অপরজন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের তবে বর্তমানে অরাজনৈতিক পরিচয়ের প্রার্থী। সেখানে ও জয়পরাজয়ে এখন পঁচা ভোটের কদর অনেক বেশী। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নাগরিক হিসেবে উপেক্ষিত বিশাল জনগোষ্টি নিরুত্তাপ চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ সর্বত্রই ভোটার হিসেবে নিজেদের কদর বুঝতে পারছেন। যদি আজকের বাস্তবতায় শিক্ষা নিয়ে উপজেলা তথা স্থানীয় পর্যায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা যেত, তবে আর যাই হোক সমাজে বিভেদ বিভক্তি এতটা বাড়তোনা বলে সচেতন মহলের অভিমত।