রূপগঞ্জে ঢাবি শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক ৩

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-২৩ - ১৯:০৭

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারভেজ আহাম্মেদ জয়কে শ্বাসরোধে হত্যার পর গুম করার উদ্দেশ্যে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। তবে, সমিতির হিসাব নিয়ে দ্বন্ধকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকান্ড হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নারীসহ তিন জনকে আটক করেছেন পুলিশ। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বড়ালু এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এর আগে, সোমবার দুপুরে বড়ালু এলাকার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পারভেজ আহাম্মেদ জয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারভেজ আহাম্মেদ জয়ের হত্যাকারীদের খুজে বের করে ফাঁসির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসুচী পালন করেছেন এলাকাবাসী।
পারভেজ আহাম্মেদ জয় বড়ালু এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি স্থানীয় মেঘনা সমবায় শ্রমজীবি সমিতিতে চাকুরি করে আসছিলেন। আটকৃতরা হলেন, বড়ালু এলাকার মেঘনা সমবায় শ্রমজীবি সমিতির শারমিন আক্তার, সোহাগ মিয়া ও জাহাঙ্গীর আলম।
নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মেঘনা সমবায় শ্রমজীবি সমিতিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষে লেখা-পড়া করে আসছেন পারভেজ আহাম্মেদ জয়। ওই সমিতির মালিকানা পার্টনার হিসেবে ছিলেন, পারভেজ আহাম্মেদ জয়ের মামা রুবেল মিয়া। রুবেল মিয়া মালিকানা পার্টনার হিসেবে সমিতিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা রেখেছিলেন। অন্যান্য পার্টনারদের সঙ্গে রুবেল মিয়ার কথা কাটাকাটি হলে তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে সমিতি থেকে চলে যান। সমিতিতে থেকে যায় আরো ৫লাখ ৮০ হাজার টাকা। ওই টাকা উত্তোলনের জন্য মামা রুবেল ভাগিনা পারভেজ আহাম্মেদ জয়কে দায়িত্ব দেন। বেশ কয়েক বার পারভেজ আহাম্মেদ জয় সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মামা রুবেল মিয়ার পাওনা টাকার বিষয়ে হিসাব-নিকাশ চায়। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে পারভেজ আহাম্মেদ জয়ের বাকবিতন্ডাও হয়েছে।
এদিকে, সমিতির কার্যালয়টি বড়ালু এলাকার শীতলক্ষ্যা তীরে অবস্থিত। গত রোববার দুপুরে সমিতির কাজে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বের হন পারভেজ আহাম্মেদ জয়। অনেক সময় সমিতির কাজ করতে গিয়ে রাত ৯টা বা কোন কোন সময় ১০টাও বেজে যায়। রাত পার হয়ে গেলেও পারভেজ আহাম্মেদ জয় বাড়ি ফিরেনি। সোমবার দুপুরে সমিতির কার্যালয়ের পেছনের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়।
বড়ালু শীতলক্ষ্যা নদীর নৌকার মাঝি সেরাজল ইসলাম জানান, মেঘনা সমবায় শ্রমজীবি সমিতির মাঠ পর্যায়ে চাকুরিজীবি সোহাগ মিয়া বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তার নৌকা যোগে পার হওয়ার সময় সেরাজল ইসলামকে বার বার বলছিলো ওই খানে একটি লাশ দেখা যাচ্ছে। মাঝি ভাই ওই খানে গেলে লাশ পাওয়া যাবে। তখন সেরাজল ইসলাম এলাকাবাসীকে পারভেজ আহাম্মেদ জয়ের লাশের খবর দেন। সমিতি অফিস সুত্র জানায়, রোববার রাতে অফিসে কর্মরত পারভেজ আহাম্মেদ জয়, শারমিন আক্তার, সোহাগ মিয়া, জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েক জন এক সঙ্গেই ছিলো।
নিহত পারভেজ আহাম্মেদ জয়ের পরিবারের অভিযোগ, পারভেজ আহাম্মেদ জয়কে শ্বাসরোধে হত্যার পর গুমের উদ্দেশ্যে সমিতির পেছনের শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, পারভেজ আহাম্মেদ জয়ের হত্যাকারীদের খুজে বের করে ফাঁসির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসুচী পালন করেছেন এলাকাবাসী। সোমবার বিকেলে বড়ালু এলাকায় মানববন্ধন কর্মসুচী শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ অংশ গ্রহন করে। এলাকাবাসীর দাবি, পারভেজ আহাম্মেদ জয় হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, এ ঘটনায় নিহতের মা পারুল বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করবেন। আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আশা করা হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।