* খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ বিনোদন কেন্দ্র হবে এটি
* পার্কে থাকবে সুন্দরবনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
* থাকবে দৃষ্টিনন্দন লেক ও হেরিটেজ মিউজিয়াম
* পাখি ও বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য সৃষ্টির পদ্ধতি
খুলনা : খুলনাবাসীর বিনোদনের জন্য রূপসা নদীর তীরঘেঁষে তৈরি হচ্ছে ‘শেখ রাসেল ইকোপার্ক’। খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আনুমানিক ৪৩ একর খাসজমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে পার্কটি। যেটি হবে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ইকোপার্ক। বর্তমানে পার্কটির নির্মাণকাজ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও আগামী ২ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে চালু হওয়ার পর মোংলায় অর্থনৈতিক জোন, ইপিজেড হওয়ায়, বাগেরহাটে বিমানবন্দর হওয়ায়, রূপসার উপর রেলব্রীজ নির্মাণ, মোংলা থেকে খুলনা পর্যন্ত রেল নির্মাণ, খুলনা কলকাতা রেল চালু-এ সব উন্নয়ন কাজের প্রেক্ষাপটে খুলনার জনবসতি অনেক বাড়বে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান হবে। কিন্তু এই বর্ধিত জনগোষ্ঠির নাগরিক বিনোদনের তেমন কোন সুব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রতিটি উৎসব, ঈদ, পূজা, নববর্ষে হাজার হাজার মানুষ বেড়ানোর কোন জায়গা পাচ্ছে না। ঈদের পর দিন দেখা যায় হাজার মানুষ রূপসা সেতুর উপর দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য রূপসা নদীর কোল ঘেঁষে সবুজ ঘেরা মনোরম পরিবেশে নির্মিত হবে এ পার্কটি। এজন্য আনুমানিক ৪৩ একর খাসজমি প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই স্থানের মাটি কেটে বাগান করা হবে, যাতে পার্কে আগতরা নির্বিঘেœ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া ইকোপার্ক নামকরণের কারণে এখানে কৃত্রিম কোনো কিছু নির্মাণের পরিকল্পনা নেই জেলা প্রশাসনের।
সূত্র আরও জানায়, ইকোপার্কটিতে জলাশয়ের উন্নয়ন করে লেক সৃষ্টি করা এবং সুরম্য করা হবে। লেকের দুপাশে পায়ে চলার পথ সুসজ্জিত করা হবে। লেকের মধ্য দিয়ে কাঠের রাস্তা (নীচে কংক্রিটের পিলার) তৈরী করা হবে। পানির উপর ভাসমান রেস্টুরেন্ট স্থাপন করা হবে। পানির বিভিন্ন রঙিন ঝর্ণা সৃষ্টি করা হবে। ফিস মিউজিয়াম স্থাপন, সম্ভব হলে এ্যাকুরিয়াম। উক্ত ফিস মিউজিয়ামে বিভিন্ন মাছ ও প্রাণীর ফসিল সংরক্ষণ করা হবে। হেরিটেজ মিউজিয়াম স্থাপন করে সুন্দরবন এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখা হবে। একদিকে বনায়ন সৃষ্টি করে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা হবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের ম্যাপ প্রদর্শন করা হবে। স্থানীয় জনগণকে পর্যটকদের সেবাধর্মী কাজে ব্যবহার করে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, ইকোপার্কটি নির্মিত হলে পার্কে বসে দর্শনার্থীরা রূপসা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। শহরের কোলাহল ছেড়ে, নিরিবিলি অবসর সময় কাটাতে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এ পার্কটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেন, ইকোপার্কটির নির্মাণকাজ এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিজস্ব উদ্যোগে কাজ চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ে খাসজমিতে অবস্থানরত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এছাড়া পার্কটির জন্য দু’পাশের পথ তৈরি এবং একটি প্রজেক্ট অফিস করা হচ্ছে। পার্কটির কাজ শেষ হতে প্রায় দু’বছর লাগবে বলে তিনি জানান। তবে এখন থেকেই অনেক দর্শনার্থী সেখানে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, খুলনা শহরের পার্শ্বে রূপসা সেতুর ১.৯ কি.মি. দক্ষিণে বটিয়াঘাটা রাস্তার পার্শ্বে রূপসার শাখা নদী কাজীবাছার পার্শ্বে প্রায় ৪৩ একর সরকারি খাস জায়গায় ‘শেখ রাসেল ইকো পার্ক’ স্থাপনের পরিকল্পনা করে খুলনা জেলা প্রশাসন। খুলনার প্রাক্তণ বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ ও জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান কয়েকবার স্থান পরিদর্শন করে গতবছর ভূমি সচিবকে দেখানো হয়। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি খুলনা, পুলিশ কমিশনার খুলনা, ডিসি খুলনা, এলজিইডি, পিডব্লিঊডির নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা চেয়ারম্যান, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ সুধীজন জায়গাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। স্থানীয় জনগণের সাথে পার্কটি নিয়ে মতবিনিময় করার পর প্রখ্যাত স্থপতি নাজিমউদ্দিন পায়েলকে ইকোপার্কটি ডিজাইন করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করে। যদিও পরবর্তীতে আরও কয়েকজন স্থপতিকে এর ডিজাইনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।