ট্রাক প্রতি চাঁদা ১শ’ টাকা
বিনোদন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে
কামরুল হোসেন মনি : ছুটির দিনে মানুষ আনন্দ উপভোগ করার জন্য ছুটে যান মহানগরীর রূপসা সেতুর দিকে। সেখানে খোলামেলা জায়গায় শিশুরা দৌড়-ঝাঁপ আর খেলাধুলায় মেতে ওঠে। বর্তমানে সেই স্থানে বসেছে অঘোষিত ট্রাক স্ট্যান্ড। দখলে চলে গেছে বিনোদনের স্থানও। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় ৮০ থেকে ১২০টি ট্রাক। বিনিময়ে ট্রাক প্রতি চাঁদা ১শ’ টাকা। মাঝেমধ্যে ওই চাঁদা তোলা নিয়ে হয় দ্বন্দ। স্থানীয় মেয়েরা ট্রাক চালকদের কাছে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থার কারণে সেতু এলাকায় লোকসমগমও দিনকে দিন কমছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ার কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। শনিবার রূপসা ব্রিজে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা এভাবে অভিযোগ তোলেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-ট্রাফিক) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন ৪-৫টি ট্রাক থাকতে পারে। তবে প্রতিনিয়ত ব্রিজের নিচে ট্রাক সারিবদ্ধভাবে রাখার বিষয় জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা তার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত এক মাস যাবৎ রূপসা ব্রিজের নিচে ফাঁকা জায়গাতে দুপুরের পর থেকে ট্রাক সারিবদ্ধভাবে রাখা হচ্ছে। রাতের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ১২০ ট্রাক এখানে অবস্থান করে। ওই সব ট্রাক প্রতি প্রতিদিন ১শ’ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। সম্প্রতি এই টাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রভাবশালীর দুই গ্রুপের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর ২-১ দিন ট্রাক রাখা বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে আবার রাখা শুরু করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা খালি ট্রাকগুলো আনলোড করার জন্য এখানে জড়ো করা হয়। ওই সব ট্রাক লবণচরায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে সিমেন্ট লোড করার জন্য সিরিয়াল হিসেবে এখানে জড়ো করা হয়। স্থানীয় যুবতী মেয়েরা ট্রাক চালকদের হাতে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয় নিয়ে ইভটিজিং এর শিকার হওয়া এক মেয়ে অভিযোগও তোলেন। পরে এটি মীমাংসা করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে রূপসা ব্রিজে ছেলেমেয়েকে নিয়ে অভিভাবকরা বিনোদনের জন্য চলে আসেন। ট্রাকগুলো ফাঁকা জায়গা দখল করে থাকার কারণে সেই পরিবেশও এখন নেই। ট্রাকের চাকায় ঘাসবনগুলো উঠে গিয়ে সেখানে বালির স্তুপে পরিণত হয়েছে। ধূলাবালির কারণে এখন হাঁটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এই টাকা উত্তোলন নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে খালিশপুর থেকে রূপসা ব্রিজে ঘুরতে আসেন মোঃ নিয়ামুল ইসলাম। সাথে রয়েছে স্কুল পড়–য়া দুই ছেলে মেয়ে। তিনি বলেন, আগে এখানে এসে ব্রিজের নিচে ফাঁকা জায়াগায় বসা যেতো। এখন সেই স্থানে ট্রাকগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা হচ্ছে। তার মতে, এভাবে ট্রাক রেখে বিনোদন পরিবেশ নষ্ট করা কারোর কাম্য নয়। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শনিবার বিকেলে দেখা গেছে, কয়েকটি ট্রাক থাকা অবস্থায় দুই সিকিউরিটি গার্ড ট্রাকের নম্বরগুলো নোট করছেন। সিরিয়াল ঠিক রাখার জন্য ওই জায়গায় সর্বক্ষণিক সিকিউরিটি গার্ড তদারকি করেন। তারাই ট্রাক প্রতি ১শ’ টাকা উত্তোলন করেন। সেই টাকা পরবর্তীতে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়।