রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক শাখায় কালো বিড়ালের ছায়া

প্রকাশঃ ২০২১-০৬-০১ - ০৩:৪৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পূর্বাঞ্চল রেলের আবারো কালোবেড়ালের ছায়া, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দুদকের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন বাণিজ্যিক শাখার রেজা হায়াত। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার দপ্তরের আওতায় ক্যাটারিং সার্ভিস, অন বোট সার্ভিস এবং প্রাইভেট মালিকানাধীন ট্রেনের রিপনের কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের নিয়মবহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রেলকে রাজস্ব বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে।

তিনি বাণিজ্যিক শাখার স্টোরের দায়িত্বে থাকায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে মালামাল সরবরাহের নয় ছয় এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঠিকাদারদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়মবহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার ফলে প্রতি বছর রেলের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায় অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার সম্পদ অর্জনকারী ও রেলের বাণিজ্য শাখায় একক আধিপত্যকারি অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বর্তমানে রাজশাহী বদলিকৃত সাবেক এও জিয়াউর রহমানের নির্দেশে এখনো চলছে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক শাখার দুর্নীতি ও লুটপাট। আর এই লুটপাটের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন রেজা হায়াত।

অনুসন্ধানে জানা যায় বরাদ্দ আসে ঠিকই। কিন্তু সে বরাদ্দ অনুযায়ী হয় না ঠিকাদারদের বিল। তাই কাজ করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় তাদের। আবার এক খাতের বিল চলে যাচ্ছে অন্যখাতে। তবে নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের বিল আবার হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই।আর এই অভিযোগ রয়েছে বাণিজ্যিক শাখার রেজা হায়দারের বিরুদ্ধে।

এই অফিসের এক উচ্চমান সহকারীর দাপটে বিল নিয়ে চলছে এমন নয়ছয়। তার ‘কেরামতি’তে এক খাতের বরাদ্দ চলে যায় অন্যখাতে। এখন তার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঠিকাদাররা। যার দাপটে এই অবস্থা সেই উচ্চমান সহকারীর নাম রেজা হায়াত। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিসিএম অফিসের একপ্রকার হর্তাকর্তাই তিনি।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, একই পদে ১০ বছর ‘রাজত্ব’ করা রেজা হায়াতের নেশা কমিশন! এই নেশায় বুদ হয়ে থাকা এই কর্মচারীর কথাই নাকি এই অফিসে শেষ কথা! অবাক করা বিষয় হল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার ইচ্ছাতেই বরাদ্দ ঢেলে সাজায় বিভিন্ন খাতে।
অভিযোগ রয়েছে, রেজা হায়াতের ইশারা মিললেই তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কপালে জোটে বিল। আর বাকিদের বিল-ভাগ্যের চাকা থাকে থমকে।

রেলওয়ের সিসিএম অফিস সূত্র জানায়, আইবাস সিস্টেম কোড ২৮০১ খাতে সাধারণ প্রশাসনের অনুকূলে রিভার্স বাজেটে মেরামত খাতসহ বিভিন্ন খাতে চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের (পূর্ব) অনূকূলে থেকে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। গত মার্চ মাসেই বরাদ্দ আসে আড়াই কোটি টাকা।

এই দফতরের মাধ্যমে বিভাগীয় বাণিজ্যিক দফতর ঢাকা ও চট্টগ্রাম খাতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ম অনুযায়ী বণ্টন না করে উচ্চমান সহকারী রেজা রাহাত আটকে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, বরাদ্দের পরিবর্তে রেজা রাহাত তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে বলেন ঠিকাদারদের। নিজের কমিশন নিশ্চিত করার পর বরাদ্দ প্রক্রিয়া চালুর অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

ঠিকাদারদের দাবি, আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ এলেও তা দফতরগুলোতে পোস্টিং না দিয়ে আটকে রেখে কমিশন আদায় করছে এ উচ্চমান সহকারী রেজা হায়াত।

দায়িত্বে থাকা রেজা হায়াতের কাছে কত টাকা বরাদ্দ এসেছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি এসব জানিনা। ঢাকা হিসাব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি শুভ’র কাছ থেকে জেনে নিন।’ কমিশন আদায়ের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা শুভ বলেন, ‘কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা রেজা হায়াতই বলবেন।’ কম্পিউটার মেরামত খাতে কত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে শুভ বলেন, ‘কম্পিউটার মেরামত খাতে কোনো বরাদ্দ দেয়নি।’
অথচ নথি অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরে অফিস কম্পিউটার মেরামত বাবদ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দের সত্যতা মিলেছে।
ঠিকাদারদের প্রশ্ন, বরাদ্দের বিষয়ে কেন রেজা হায়াত কোনো তথ্য দেন না? বরাদ্দ দেওয়ার পরও কম্পিউটার মেরামত খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে প্রচার চালানোর নেপথ্যে কি তা তদন্ত হওয়া উচিত। এ দুই জনের যোগসাজশেই কি সিসিএম অফিসে ঠিকাদারদের বিলের বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয় চলছে?

জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মেরামত খাতে বাজেট না থাকায় বহু ক্ষুদ্র ঠিকাদার কাজ শেষ করেও বিল নিতে পারেননি। রেলওয়ে বাণিজ্যিক বিভাগ ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিঠি দিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট থেকে যতটা সম্ভব ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বকেয়া নির্বাহ করার জন্য অনুরোধ করে।

হাতে আসা একটি বরাদ্দ তালিকায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে অফিস আসবাব মেরামত বাবদ ২৪ লাখ, কম্পিউটার মেরামত খাত ৭লাখ ৫০ হাজার, অফিস সরঞ্জামাদী বাবদ ১৫ লাখ, আসবাবপত্র বাবদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসার প্রমাণ মিলে। এছাড়া ৩২৫৫১০৫ কোড বাবদ বরাদ্দ আসে ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ।

সিসিএম দফতর ওই খাত থেকে ২৬ লাখ টাকা আইন বহির্ভূতভাবে কেটে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, এক পদে ১০ বছর থাকা রেজা হায়াত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অলিখিত পার্টনারশীপে ব্যবসা করেন রেলওয়ে অঙ্গনে।

রেলওয়ের ঠিকাদার মহসিন অভিযোগ করেন, ‘চট্টগ্রামে রেলওয়ের দুই মাফিয়ার একজনকে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে বদলী করা হলেও দ্বিতীয় মাফিয়া রেজা হায়াত এক পদেই আছেন ১০ বছর। বলা চলে সিসিএম দফতরে তার কথা শুনেই কাজ করতে হয় কর্মকর্তাদের।’

এ ব্যাপারে জানতে চিফ কমাশিয়াল ম্যানেজার নাজমুল ইসলামকে কল করা হলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের ফোন রিসিভ করেননি।
রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়গুলো আমার জানা ছিলনা। যেহেতু আমাকে জানিয়েছেন বিষয়টি আমি দেখবো।’

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সুইপিংয়ের কাজ সিসিএম দফতর থেকে রেজা হায়াতের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে একটি সিন্ডিকেট। এই কাজগুলো ভাগিয়ে নিতে এই সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে অনেকদিন যাবত।