শিশু খাদ্যের মূল্য লাগামহীন

প্রকাশঃ ২০২৩-০৩-১৯ - ১৩:০৭

ইউনিক ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার পাশাপাশি প্রভাব পড়ে শিশু খাদ্যে ব্যবহৃত পণ্যেও। এসময় দিশেহারা হয়ে পড়েন প্রতিটি পিতা-মাতার সাথে পরিবারের অন্যলোকেরাও। পরবর্তীতে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশু খাদ্যের আরেক দফা দাম বেড়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন এ দর বাড়তে থাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন শিশু খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন বিত্তের শিশুদের মেধা এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। শিশুরা বিভিন্ন রোগেও আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাদেশের ন্যায় খুলনাতেও শিশু খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুধের স্বল্পতার কারণে গত ৬-৭ মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগতভাবে শিশুদের গুঁড়ো দুধের দাম বাড়ায় দেশীয় বাজারের উপর এর প্রভাব পড়েছে।

খুলনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে ,গত ছয় মাসের ব্যবধানে শিশুদের প্রতিটি খাদ্যে (গুঁড়ো দুধের) দাম বেড়েছে কয়েক গুণ বেশী। হঠাৎ করে এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ আর অভিভাবকরা পড়েছেন দু:শ্চিন্তায়। এমনিতে নিত্য পণ্যের দর বৃদ্ধিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী হারে বেড়েছে গুাঁড়ো ধুধের দাম। শহরের বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, নেসলে ল্যাকটোজেন ১ ইনফ্যান্ট ফর্মুলা (৩৫০ গ্রাম) ফেব্রুয়ারী মাসে দাম ছিল ৪৬৫ টাকা। এখন দাম বেড়ে ৫১০ টাকা, নেসলে ল্যাকটোজেন ১ ইনফ্যান্ট ফর্মুলা টিন ( ৪০০ গ্রাম) ৫০০টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫০টাকা, নেসলে ল্যাকটোজেন ২ (৩৫০ গ্রাম) ৪১০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকা, নেসলে ল্যাকটোজেন ৩ ফলো আপ ফর্মুলা টিন  (৪০০ গ্রাম) ৬৫০টাকা, নেসলে ল্যাকটোজেন ৩ ফলো আপ ফর্মুলা টিন (৩৫০ গ্রাম) ৪০০ টাকা, ৯০০ গ্রাম ওজনের ল্যাকটোজেন ২ টিনের কৌটা ৯৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১,১১০ টাকা,নেসলে নান ১ ফলো আপ ফর্মুলা উইথ অপটিপ টিন (৪০০ গ্রাম) ৮৩০ টাকা,নেসলে নান ২ ফলো আপ ফর্মুলা উইথ অপটিপ টিন (৪০০ গ্রাম) ৮৯০টাকা।

বায়োমিল ১ ইনফ্যান্ট দুধ ফর্মুলা টিন (৪০০ গ্রাম) ৬৫০টাকা, এপটামিল ১ নবজাতক শিশুর দুধ (জন্ম থেকে) (৮০০ গ্রাম) ১৮৫০টাকা, নেসলে সেরেলাক ১ গম ও দুধ (৬ মাস +) বিব ( ৪০০ গ্রাম) ৩৬৫টাকা, নেসলে সেরেলাক ১ চাল ও দুধ (৬ মাস +) বিব (৪০০ গ্রাম) ৩৯০ টাকা, নেসলে নিডো ফরটিগ্রো  ফুল ক্রিম গুঁড়া দুধ টিন (২.৫ কেজি) ২,৬৫০টাকা, ডানো ১কেজির প্যাকেট ৬৫০ টাকা বেড়ে ৮২০টাকা, ডানো ৪০০ গ্রাম ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকা, ডানো ৫০০ গ্রাম ৩২০টাকা থেকে বেড়ে ৫৯০টাকা।

অপরদিকে সুজি ৫০-৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০টাকা, তালমিসরি কেজি প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা (যা চিনি দিয়ে তৈরী)। এছাড়াও ডানো, নিডো, রেডকাউ, ফ্রেশ,ডিপ্লোমা, হরলিক্সসহ প্রায় সকল প্রকার শিশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বড় বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ জানান,অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে শিশুদের গুঁড়ো দুধ সহ শিশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার সময় থেকে দাম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তারপর জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে এক লাফে দ্বিগুণেরও বেশী বেড়ে গেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আবারো শিশু খাদ্য ও গুঁড়ো দুধের দাম বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, যেহারে শিশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি  পাচ্ছে তাতে স্বল্প আয় ও নিন্ম আয়ের অভিভাবকগুলো পড়েছে বিপাকে। আয়ের তুলনায় তাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যয় বেশি। গত ছয় মাসের  ব্যবধানে শিশুদের খাদ্যে যে ভাবে দাম বেড়েছে তাতে ব্যবসায়ীরাও অবাক।

নিলুফা ইয়াসমিন নামে নগরীর বসুপাড়ার এক গৃহবধু জানান, সংসারে আসা নতুন অতিথিকে ওর চাহিদা মাফিক দুধ দিতে পারছিনা মুল্যবৃদ্ধির কারণে। পুর্বে ভাতের মাড় (ফেন)  খাইয়ে একটি শিশুকে বাবা-মা বড় করতে পেরেছে। বর্তমানে তাও সম্ভব নয়। কারণ বর্তমানে ভাত রান্না শেষে ঘন আকৃতির ভাতে মাড় পাওয়া যায়না। তিনি আরো বলেন, এভাবে শিশু খাদ্যের মুল্য বাড়তে থাকলে আমার সন্তানের মেধা ভালো হবে কি করে।

খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: কামরুজ্জামান দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, প্রতি দিনই শিশু খাদ্যের দাম বাড়ছে। করোনার চাপ এখন না থাকলেও শিশু খাদ্যের দর বৃদ্ধি থামেনি। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুদের বাড়ন্ত শরীরে বাড়তি খাবার দেয়া একান্ত প্রয়োজন। তাতে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মেধার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা দেয়। সুস্থ এবং স্বাভাবিক ভাবে শিশুদের বেড়ে উঠতে এসব খাবার দেয়া খুবই প্রয়োজন। তানাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে চিন্তায় পড়তে হবে।