কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : দিনকে দিন তাপমাত্রা কমে যাওয়া খুলনাঞ্চলে আস্তে আস্তে শীতের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও শ্বাস কষ্ট রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়ায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। বয়স্করাও হচ্ছে ঠান্ডাজনিত নানান রোগে। খুমেক হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে গত দুই দিনে মেডিসিন ও ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেড সংকট থাকায় রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
সোমবার নগরীর খুমেক হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে মেডিসিন ও ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে গেলে রোগীদের উপচে পরা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিলিমা মন্ডল বলেন, গত দুই-একদিন ধরে শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড সংকট থাকার কারণে অনেকদের মেঝেতে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুরা। তার দেয়া তথ্য মতে, গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ২৬ জন ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত সংখ্যা রয়েছে ১৪ শিশু। এই সবরোগের পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুরা নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি।
ওই হাসপাতালে মেডিসিন ইউনিট-২ দেখা যায়, বয়স্করা সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড সংকট থাকার কারণে অনেক রোগীরা ওই ওয়ার্ডে বারান্দায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লা আল মাহবুব এ প্রতিবেদককে বলেন, তার মতে বিগত বছরের তুলনায় শিশুদের ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়া তেমন প্রকোট দেখা দেয়নি। কয়েক বছর পর পর এরকম হয়ে থাকে। এবার ভিন্ন। রোগীর চাপ বেড়েছে স্বীকার করে বলেন, আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
খুলনা আবহাওয়াবীদ আমিরুল আজাদ সোমবার দুপুর ৩টার পর এ প্রতিবেদককে বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় সোমবার বাতাসের গতিবেগ বেশি ছিল। সকালে একরকম আবার বিকেলে আরএকরম। যশোরে গতকাল সর্বোনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। তিনি বলেন, এভাবে তাপমাত্রা কমতির দিকে থাকলে এ মাসের শেষের দিকে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্য প্রবাহ সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে, সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টার পর খুলনায় সর্বোনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক শুন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ছিল ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলেসিয়াস, রোববার (১৭ ডিসেম্বর) খুলনায় তাপমাত্রা ছিল সর্বনি¤œ ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এর আগে দিন ১৬ ডিসেম্বর ছিল সর্বনি¤œ ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১৫ ডিসেম্বর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শিশু হাসপাতালে পি-থ্রিতে ডায়ারি ওয়ার্ডে ২২ মাসের শিশু পুত্র তরুন হালদার। তার পিতা তুহিন হালাদার বলেন, গত সোমবার রাতে তার শিশু পুত্র বমির পাশাপাশি ডায়ারিয়া শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এখন বমির ভাবটা কমেগেছে। পায়খানাও কমেছে। এখন একটু সুস্থের পথে। তার মতে, প্রতিদিন দিন-রাতে এ হাসপাতালে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিউমোনিয়া, ডায়ারিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ওই ওয়ার্ডে সিনিয়র স্টাফ নার্স লাকী ইয়াসমিন সোমবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, তার মেডিসিন ও ডায়ারিয়া শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে বেশি রোগী আসছে। যার মধ্যে ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। যাদের বয়স ৬ মাস থেকে দেড় বছরের মধ্যে। যার কারণে মেডিসিন ও ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে কোন বেড খালি পাওয়া যাচ্ছে না।
শিশু হাসপাতালে সূত্র মতে, ১ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০৬ শিশু। এর মধ্যে ডায়ারিয়া আক্রান্তম রোগীর সংখ্যা ১৬৪ জন ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা ৪২ শিশু রয়েছে। যার মধ্যে ১ জন শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত মারা যায়। এছাড়া এই কয়দিনে আরও ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত সংখ্যা এর চেয়ে আর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ওই সূত্রটি জানায়।