শীত থেকে বাঁচতে আগুনের উষ্ণতা : ঝরছে প্রাণ

প্রকাশঃ ২০২১-০২-০৩ - ১৮:২৩

গত দুই মাসে শিশুসহ মৃত্যু ৭

কামরুল হোসেন মনি : শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঝরছে মানুষের প্রাণ। সচেতনতার অভাবে এ রকম দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ৩-৪ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। যার মধ্যে মহিলা ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশই আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে। মৃত্যুর হাত থেকে অনেকে ফিরলেও পঙ্গুত্ব বরণ করছে। দিনকে দিন পোড়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে বেড স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। রোগীরা বেড না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোনো না কোনো জায়গা থেকে এ রকম দুর্ঘটনায় পড়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হচ্ছেন। শীত থেকে বাচতে আগুনের উষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে মহিলা ও শিশুরাই বেশি দগ্ধ হচ্ছেন। বাবা- মায়ের অসাবধানতার কারণেই শিশুরা অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে। গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি খুমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিদগ্ধ ও দুর্ঘটনায় ঝলসে গিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭৯ জন। এ সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন শিশুসহ ৭ জন।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, খুমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিট আরও সম্পাসরণ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আলোচনা অব্যহত রয়েছে। এই হাসপাতালকে ৫শ বেড পরিবর্তে ১ হাজার বেড রুপান্তরিত করার জন্য ইতিমধ্যে পত্র পেয়েছি। জায়গা স্বল্পতার কারণে বর্তমানে বার্ণ ও প্লাস্টিক ইউনিট বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করার সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যেও রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা: মো: তরিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান সরকার প্রত্যেক বিভাগে আলাদাভাবে বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনায় খুমেক হাসপাতালে ১শ শয্যা বেড চালুর সিদ্ধান্ত হয়েেেছ। যা আগে ৫০ শয্যা বেড চালুর প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দেয়। এটা আমার আরও ৫০ শয্যা বৃদ্ধি করে ১শ শয্যা বেডের জন্য সুপারিশ করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি একমত পোষন করেছেন। ওই ইউনিট চালুর জন্য প্রাথমিকভাবে খুমেক হাসপাতালের আইসিসিইউ জায়গা প্রাথমিকভাবে নির্ধারন করা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটের সহকারি রেজিস্ট্রার ডা: নূরুল হুদা জনি এ প্রতিবেদককে বলেন, শীত যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই অগ্নিদগ্ধ ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে আগুন পোহাতে গিয়ে মহিলাসহ শিশুরাই বেশি দগ্ধ হচ্ছে। শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে বয়স্করা আগুনে পুড়ে যাওয়ায় দগ্ধ তালিকা বাড়ছে। কেউ বা পূজা করতে গিয়ে কুপির মাধ্যমেও অগ্নিদগ্ধ হচ্ছেন। শিশুরাও পুড়ছে। বর্তমানে প্রতিদিন আগুনে পুড়ে গিয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি বলেন, শীতের সময় শরীরে অতিরিক্ত কাপড় থাকে। এ সময় কোনোভাবে আগুন ধরে গেলে সব কাপড় খুলতে সময় লাগে। অথবা কখনো খোলার আগেই শরীরের আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শীতে বয়স্ক ও শিশুদের আগুনে পোহানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যারা এই দুর্ঘটনায় পড়ছেন তার অধিকাংশই বয়স্ক।
খুমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটের সিনিয়ার স্টাফ নার্স সাবুরা খাতুন জানান, মহিলা ও পুরুষ সহ অনুমোদিত ১৫ বেড সহ মোট বেড সংখ্যা ৩৬টি। শীতের সময় পোড়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরে কোন পোড়া রোগী চিকিৎসা নিতে আসলে আমরা তাদেরকে ফেরত পাঠায় না। তাদেরকে সেবার দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এই ইউনিটে জরুরিভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমান রয়েছে। কোন ঘাটতি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ সূত্র মতে, সাধারণত জানুয়ারি মাসে শীতের প্রকোপ বাড়ার পর বিভিন্ন উপজেলায় আগুন পোহাতে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে পেড়া রোগীসহ বিভিন্ন সময়ে দগ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছে ৯১ জন। এ সময়ে মারা যায় ৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ জন, মহিলা ১ জন ও শিশু (কন্যা) ১ জন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে চিকিৎসাধীন ছিলো ৮৮ জন। এ সময়ে মারা ৪ জন। এর মধ্যে মহিলা মারা গেছে ৩ জন ও শিশু (কন্যা) মারা গেছে ১ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩৫ জন। যার মধ্যে মহিলা মৃত্যু ১৮ ও শিশু রয়েছে ৮। গত বছরের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৪ জন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধসহ বিভিন্ন কারণে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮৬২ জনের মতো। এর মধ্যে মারা গেছে ৩৩ জন। যার মধ্যে মহিলা রয়েছে ১৭ জন ও শিশু রয়েছে ৮ জন। এর আগে ২০১৭ সালের গত এক বছরে আগুন পোহানো ও বিভিন্ন কারণে আগুনে ঝলসে যাওয়া রোগীর ভর্তি সংখ্যা ছিল ৭২৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩১ জন। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫২ জনকে ঢাকা বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছি