শ্যামনগরে ৩ কি:মি: সংস্কারের অভাবে রাস্তায় ভোগান্তি

প্রকাশঃ ২০২৩-০১-১৩ - ১২:০৪

শ্যামনগর প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি ইউনিযনের খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টারের পাশে বেড়িবাঁধে ভাঙন পরবর্তী ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও প্র্বূ দুর্গাবাটি গ্রামের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বাড়ি থেকে গোপালের মোড় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত তিন কিলোমিটার নির্মাণাধীন রাস্তা টি সংস্কার করা হয়নি।

জলোচ্ছ্বাসে মাটি ও বালি ধুয়ে বেরিয়ে পড়া ইটের খোয়ার কারণে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চারটি গ্রামের কয়েক হাজারের বেশি মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পোড়া কাটলা, পশ্চিম পোড়া কাটলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই প্রবল জলোচ্ছ্বাসে খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটির সাইক্লোন শেল্টারের পাশে ৩২০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।

প্লাবিত হয় বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গাবাটি গ্রাম। পাড়া কাটলা কালভার্টের পশ্চিম পার্শ্ব থেকে পূর্ব দুর্গাবাটির গোপালের মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নির্মাণাধীন সড়কের সাতটি স্থানে পানি ওভারফ্লো হওয়ায় ওইসব জায়গার মাটি সরে যেয়ে খাদে পরিণত হয়।

এছাড়া ওই তিন কিলোমিটার রাস্তার উপরের মাটি ও বালি সরে ইটের খোয়া বেরিয়ে পড়ে। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে শুধুমাত্র সাইকেল বা ভ্যানযোগে তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাত হাজার মানুষের চলাচল, সুপেয় পানি সংগ্রহ এবং হাট বাজারে যাতায়াত দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অসুস্থ বয়স্ক মানুষ ও গর্ভবর্তী মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয়।

পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের কমলেষ মন্ডল জানান, গত বছরের ১৪ জুলাই খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টারের পাশে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এসময় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার তিন কিলোমিটার রাস্তাই চলাচলের অনুপোযোগী।

ভ্যানচালক রজনীকান্ত জানান, প্রয়োজন হলেও কেউ এ রাস্তা ব্যবহার করতে চায় না। কিশোরী সঞ্চিতা মন্ডল বলেন, আমার বাড়ি খুলনার কয়রায়। মামার বাড়ি থেকে পড়াশুনা করি। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে বাবা মা কেউ গত ছয় মাসে তাকে দেখতে আসেনি।

মাছ ব্যবসায়ী গোপালের মোড়ের রাজীব সরকার বলেন, এখানে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। এ রাস্তা দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে না বললেই চলে। অবিলম্বে এ রাস্তা সংস্কারের জন্য তিনি উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে নিদ্দিষ্ট সময়ে ঠিকাদার কাজ শেষ করলে তাদের কপালে এতো দুর্ভোগ হতো না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী কেএম শহীদুল ইসলাম জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটির দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার ১৯৩ টাকা বরাদ্দ করে। যা ভ্যাটসহ দুই কোটি দুই লাখ ২০ হাজার ৬৯৫ টাকা। ঠিকাদার শ্যামনগরের বাদঘাটার নুরুল হক মোল্লাকে ২০২০ সালের ৩ মে এক চিঠিতে এলজিইডি সাতক্ষীরা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকার ওই বছরের ১০ মে থেকে পরবর্তী বছরের ৯ মে এর মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেন। দেরীতে হলেও রাস্তায় রোলার টানার পরপরই পিচ দেওয়ার আগে ২০২২ সালের ১৪ জুলাই জলোচ্ছ্বাসে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়।

ঠিকাদার নুরুল হক মোল্লা জানান, ২০২০ সালের ৩ মে দুই কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কার্যাদেশ পাওয়ার পর ১০ মে থেকে তিনি রাস্তার কাজে হাত দেন। ২০২১ সালের ৯ মে তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ওই বছর ও ২০২২ সালে দুইবার দুর্গাবাটি নামকস্থানে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কাজ বিলম্বিত হয়।