শ্রমিকদের উৎকোচের হিসাব দিতে পারছেন না খুলনার তাকবির এন্টারপ্রাইজ

প্রকাশঃ ২০২০-০৮-১৭ - ১৮:৫৫

তাকবির এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারের বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু
শ্রমিকদের বেতন থেকে নেয়া ২০ হাজার টাকা উৎকোচের হিসাব দিতে পারছেন না।
কামরুল হোসেন মনি, খুলনাঃ খুলনা জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাকবির এন্টারপ্রাইজ নিবন্ধন ছাড়াই ২১১ জন শ্রমিককে অবৈধভাবে কর্মরত রেখেছেন। বিদ্যামান শ্রম আইনে নিবন্ধন নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না এ ব্যবসায় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। গত জুন মাসে তার নিবন্ধন শেষ হলে তিনি পুনঃরায় ওয়ার্কপার্মিট এ রিনিউ করতে পারেননি বরং ২১১ জন শ্রমিকের বকেয়া ১৩ মাসের বেতন দেওয়ার সময় তাদের কাছ থেকে উৎকোচের নামে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা আদায় করেছেন, যা প্রায় অর্ধকোটি টাকা। গত ১৩ আগষ্ট ‘নিবন্ধন খরচের নামে বাণিজ্য’ খুলনা জেনারেল হাসপাতালে রমরমা আউটসোর্সিং ব্যবসা শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক প্রবাহ পত্রকিায় প্রকাশিহ হয়। এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আউসোর্সিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাকবির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: ইকতিয়ার উদ্দিন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তিনি ওই ঘটনাটির বিষয় মিথ্যা প্রমানিত করতে তার অনুসারী আউটসোর্সিং নিয়োজিত কর্মচারিদের টাকা নেননি এই বিষয়ে লিখিত আকারে স্বাক্ষর নেওয়ার পক্রিয়া শুরু করেছেন। অন্যদিকে ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইকতিয়ার উদ্দিন এই প্রতিবেদকের কাছে ৩০-৪০ জন কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন বলে স্বীকারও করেন। পরবর্তীতে তিনি জানান,  আউটসোর্সিং শ্রমিকদের যখন বেতন হচ্ছিল না তখন তিনি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেন এবং তারা যখন এককালীন ১৩ মাসের বেতন পান তখন ৩০-৪০ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন বাবদ কেটে রাখেন। বাকি ১০ হাজার টাকা নিবন্ধন করাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঘুষ দেবার কথা বলেন তিনি। তার কথায় অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি ২১১ জনকে নিজের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দিয়েছিলেন যখন বেতন হচ্ছিলনা। কিন্তু যখন টাকা কেটে রাখেন তখন ৩০-৪০ জনের কাছ থেকে কেটে রাখেন।  বাকিদের কাছ থেকে তিনি টাকা কেন কাটেননি এ প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
একটি সূত্র জানায়, উল্লিখিত শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ঠিকাদার ইকতিয়ার উদ্দিন  ২১১ জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত তার অনুসায়ী লোকজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়নি বলে স্বাক্ষর করিয়ে রাখছেন। যারা স্বাক্ষর করছেন না তাদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
একটি সূত্র মতে, তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বতর্মানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে তাকবির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: ইকতিয়ার উদ্দিন কে ১৬ আগষ্ট রাত ৭টা ৩৫ মিনিট থেকে ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বারংবার তার ব্যবহৃত সেল ফোনে কল দিলেও তিনি  রিসিভ করেননি।

সূত্র মতে, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিং নিয়োজিত এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাকবির এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন আমাদের ২১১ জন নিয়োজিত সকল শ্রমিকের কাছ থেকে এককালীন ১৩ মাসের বেতন দেওয়ার সময় ২০ হাজার টাকা করে কর্তন করে রেখে দেয়। সে আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জনকৃত অর্থ ২০ হাজার টাকা অবৈধভাবে কেটে নিয়েছে। জানা গেছে, গত দুই দশকে দেশে আউটসোর্সিং ব্যবসার ব্যাপকতা বেড়েছে। শুরুতে আউটসোর্সিং ব্যবস্থায় সেবা প্রদানকারী কর্মীরা দেশের প্রচলিত শ্রম আইনের আওতায় না থাকলেও রানা প্লাজায় ধ্বসের ঘটনায় আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহ করা আহত ও নিহত কর্মীদের দায়িত্ব নেয়ার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ পাওয়া যায়নি।
এ প্রেক্ষাপটে, ২০১৩ সালে সংশোধিত শ্রম আইনে তাদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর ২০১৫ সালে শ্রমবিধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়। সংশোধিত শ্রম আইন ২০১৩ তে বলা হয়, অন্য কোন আইনে যাহাই থাকুক না কেন, কোন ঠিকাদার বা আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, যাহা বিভিন্ন সংস্থায় চুক্তিতে বিভিন্ন পদে কর্মী সরবরাহ করে থাকে সরকারের নিকট হইতে রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত কার্যক্রম পরিচালনা করিতে পারিবে না। আইনে আরো বলা হয়, এই আইনের অধীন এতদুদ্দেশ্যে বিধি প্রণীত হইবার ৬ মাসের মধ্যে দেশে বিদ্যমান সকল ঠিকাদার সংস্থা সরকারের নিকট হইতে  রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করিতে বাধ্য থাকিবে। ঠিকাদার সংস্থা দ্বারা সরবরাহকৃত শ্রমিকগণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের শ্রমিক হিসেবে গণ্য হইবেন এবং শ্রম আইনের আওতাভুক্ত থাকিবেন। আউটসোর্সিং ব্যবস্থায় খুলনার শিল্পপ্রতিষ্ঠান, হোটেল, ব্যাংক বীমার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মী, ক্লিনার ও গাড়িচালক থেকে শুরু করে এমনকি ভাসমান শ্রমিকদেরও আউটসোসিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কর্মী সরবরাহ করে এ ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।