আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে ও সংসার করার দীর্ঘদিন ৩ বছর প্রথম স্ত্রী তহমিনা এবং কন্যা তারিনাকে ফেলে এসে দ্বিতীয় বিবাহ করা স্বামীর বাড়ীতে উঠে স্বামী-সন্তানের স্বীকৃতির আদায়ের জন্য অনশন করছেন তহমিনা। স্বামী ও সন্তানের পিতৃ অধিকারের দাবীতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা গ্রাম থেকে গত শনিবার আসা তহমিনা আক্তার (২৭) তাদের ১ বছরের কন্যা সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস তারিনকে নিয়ে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামের স্বামী রাখাল চন্দ্র পাল ওরফে রিপন খানের বাড়ীতে উঠে গত ৬ দিন ধরে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, রামপালের গিলাতলা গ্রামের বিমল কৃষ্ণ পালের পুত্র রাখাল চন্দ্র পাল (৩১) ঢাকা মিরপুরের রিও ফ্যাসন ওয়্যার লিঃ এ কাজ করার সময় পরিচয় হয় ফেনী জেলার সোনাগাজী উজেলার বগাদানা গ্রামের এনায়েত উল্লাহর মেয়ে তহমিনা আক্তার (২৭) এর সাথে। প্রথম থেকেই হিন্দু রাখাল চন্দ্র পাল নিজেকে মুসলমান পরিচয়ে নাম রিপন খান বলে তহমিনার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্পর্কের এক পর্যায়ে ২০১৪ সালের ১০ই মার্চ লোটারী পাবলিকের মাধ্যমে রাখাল ওরফে রিপন বিয়ে করেন তহমিনাকে। এরপর তাদের কোল জুড়ে সংসারে আসে কন্যা সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস তারিনা। তাদের একমাত্র সন্তান তানিরা বয়স এখন ১ বছর। স্বামী রাখাল পাল ওরফে রিপন খাঁন বিভিন্ন অজুহাতে স্ত্রী তহমিনার সঞ্চিত প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এরপর স্বামী রাখাল পাল ওরফে রিপন গ্রামের বাড়িতে আসার কথা বলে স্ত্রী ও সন্তান রেখে নিরুদ্দেশ হয়। এরপর স্বামী নিরুদ্দেশের ঘটনায় স্ত্রী তহমিনা ঢাকার পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। বহু খোজাখুজি করে না পেয়ে গৃহবধু তহমিনা স্বামীর রামপালের বাড়ীর ঠিকানায় রওনা হয়ে আসেন। রামপালে এসে স্থানীয় লোকজনকে তাদের দুইজনের বিয়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঠিকানা খুজে পান। এ সময় স্থানীয় লোকজন ওই ছবি দেখে বলেন এ রিপন খাঁন নয়, এতো রাখাল চন্দ্র পাল। স্থানীয়দের মুখে স্বামী মুসলমান নয় হিন্দু এ কথা শুনতেই কোলে থাকা সন্তানকে নিয়ে চিৎকার করে কান্নাকাটি ও আহাজারি করতে থাকেন। তহমিনার আহাজারি দেখে স্থানীয়রা রাখাল রিপনের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে বিষয়টি জানান। এরপর রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মোঃ আবু সাইদ বিষয়টি নিয়ে রাখাল চন্দ্র পালের পরিবারের সাথে কথাও বলেছেন। ঘটনায় রাখাল পালের মা গীতা রানী পাল বলেন, আমার ছেলে পূর্বে কোন বিবাহ করেনি, কয়েক দিন পূর্বে আমরা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ দিয়েছি। রাখাল বর্তমানে কোথায় আছে তা আমরা জানি না। তিনি পুত্র বধু তহমিনা ও পুতনি তারিনার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। তহমিনা বলেন, আমি স্বামীর সংসার ও সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতি পেতে চাই। হিন্দু নাম পরিচয় গোপন রেখে মুসলমান পরিচয়ে আমাকে বিবাহ করে প্রতারণার মাধ্যমে আমার গচ্ছিত টাকা ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করেছে রিপন। আমি আমার ও সস্তানের স্বীকৃতি চাই। এ জন্য আমি প্রশাসনের দৃর্ষ্টি আকর্ষণসহ সকলের সহযোগী চাচ্ছি। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আবু সাইদ বলেন, রাখাল পাল তার জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে রিপন খাঁন নাম ধারণ করে একজন মুসলিম মেয়েকে প্রতারণার মাধ্যমে যে বিবাহ করেছে কাগজপত্রে তার প্রমাণ মিলেছে। রাখাল যে অন্যায় করেছে তা সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সামিল। এ প্রতারণার সঠিক বিচার হওয়া উচিৎ।
এদিকে এ ঘটনায় প্রতারক রাখালের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন গ্রামবাসী।