সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জনপ্রতিনিধিরা তিনিটি ব্যাংকের ফটকের সামনে ট্রাকভর্তি বর্জ্য রেখে অবরোধ করেছেন। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ সার্বিক খরচের চালানোর চেক ডিজঅনার করাসহ বেক লেনদেন করতে না পারায় এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সোমবার সকাল থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগামী দুই দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ^াস দেওয়ায় তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। অবরোধ চলার সময় অন্য গ্রাহকদের ব্যাংকে ঢুকতে দেননি পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ফলে ব্যাংক গুলিতে সকল প্রকার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
পৌরসভার কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাছির আলী বলেন, তাদের পানি বিভাগের কর্মচারীরা পাঁচ মাস ধরে বেতন পান না। তাঁদের চার শতাধিক কর্মচারী-কর্মকর্তা চেকে টাকা না উঠলে ঈদের আগে তাঁরা বেতন পাবেন না। বাধ্য হয়ে তাঁরা সোমবার সকাল ১০ টা থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেড ব্যাংকের সামনে অবরোধ করেন।
সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গত ২৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৪ জানুয়ারি ওই মামলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তাজকিন। বিচারক মো. হুমায়ুন কবীর তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি ১ নম্বর প্যানেল মেয়র হিসেবে তাঁকে (কাজী ফিরোজ হাসান) ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁকে ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিনকে অর্থনৈতিক লেনদেন করারও ক্ষমতা দেওয়া হয়।
বরখাস্তকৃত মেয়র তাজকিন জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাঁকে জামিনে মুক্তি দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি হাহকোর্ট তাঁর সাময়িক বরখাস্তর আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। আইনজীবী রুহুল কদ্দুস কাজলের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের একটি চিঠিও হাতে পান তিনি। চিঠির অনুলিপি পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিন ও সচিব লিয়াকত হোসেনকে জানিয়ে তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি নিজ পদে যোগদান করতে যান। কিন্তু তাঁকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি।
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান জানান, তারা ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেড ও আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ব্যাংকে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন ও সার্বিক খরচ চালানোর জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় এক কোটি টাকার চেক পাঠান। কিন্তু টাকা না দিয়ে তাঁরা চেক প্রত্যাখান করেন। চেক প্রত্যাখান করা ও টাকা দিতে গড়িমসি করায় সোমবার পৌরসভার কর্মচারী ও কর্মকর্তারা তিনটি ব্যাংক অবরোধ করেন।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার ব্যবস্থাপক চন্দ্রশেখর রায় ও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক লিমিটেড নির্বাহী কর্মকর্তা সরফরাজ নেওয়াজ জানান, মন্ত্রণালয় অর্থনৈতিক লেনদেন করার জন্য যে প্রজ্ঞাপনবলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও নির্বাহী প্রধান কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দিয়েছিল, হাইকোর্ট বিভাগ ১৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে তা তিন মাসের স্থাগিত করেন। ফলে তাঁরা চেকে টাকা দিতে পারছেন না।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিন বলেন, সোনালী ব্যাংক ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁদের স্বাক্ষরে টাকা দিয়েছেন। সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড তাঁদের ব্যাংকে পৌরসভার অ্যাকাউন্টে থাকা ৭৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৮৫ টাকা তিনটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফেরত দিয়েছে। কিন্তু অন্য চারটি ব্যাংক টাকা না দিয়ে দেড় মাস ধরে বলে আসছে বিষয়টি তারা দেখছে। এর ফলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বিলসহ অন্যান্য খরচ মেটানো যাচ্ছে না।