সেলিম হায়দার তালা : দেশের প্রখ্যাত কবি সিকান্দার আবু জাফরের স্মৃতি রক্ষা ও পর্বণ প্রিয় বাঙালির ঐতিহ্যের সন্ধানে ২০১৭ সাল থেকে কবির গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালায় সরকারি ভাবে পালিত হচ্ছে সিকান্দার মেলা। এজন্য প্রতি বছর মেলার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় হলেও তা অদ্যবধি কবির স্মৃতি সংরক্ষণ বা মেলায় আগতদের কবি সম্পর্কে ধারণা দিতে কতৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে একদিকে যেমন সিকান্দার আবু জাফর সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের অজানা থেকে যাচ্ছে, তেমনি চিত্ত বিনোদনে বাণিজ্যিক প্রসারতায় নানা আয়োজনে মূল লক্ষ থেকে সরে ঐতিহ্য হারাচ্ছে তালাবাসীর প্রাণের মেলা সিকান্দার মেলা। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তালার তেঁতুলিয়াতে আয়োজিত মেলায় কবির জীবনী ও সাহিত্য সংষ্কৃতি বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি তাঁর লেখা বই,গান,নাটক ও কবিতা প্রদর্শনের শর্ত থাকলেও বাণিজ্যিকিকরণের নানা পসরায় এবারও চাপা পড়ছে তা। সব মিলিয়ে মেলার সার্বিক আয়োজনে ভাল নেই তালাবাসীর মন। নগ্ন নৃত্যু আর অশ্লীলতায় চাপা পড়ছে মেলার সব আয়োজন।
দেশের প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক সিকান্দার আবু জাফরের ৯৯ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বারের ন্যায় এবারও সরকারের সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়াস্থ কবির জন্ম ভিটায় উদযাপিত হচ্ছে সিকান্দার মেলা। এলক্ষে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতির পর আয়োজকরা গত ৯ মার্চ থেকে ১৫ দিন ব্যাপী শুরু হয়েছে সিকান্দার মেলা। ইতোমধ্যে আয়োজকরা মেলার বর্ণাঢ্য বাস্তবায়নে কমিটি গঠন থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান সূচী,সিদ্ধান্ত,উদ্ভোধন,মাঠ ইজারা,অনুমোদিত ইভেন্ট ও ব্যবস্থাপনা সহ নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে চললেও মেলার প্রায় শেষ ভাগেও শুরু করতে পারেননি ব্যবস্থাপনার থ’ ক্রমিকের কবির জীবনী ও সাহিত্য সংস্কৃতির কোন আলোচনা বা সংশ্লিষ্ট কোন আয়োজন। এমন অবস্থায় সাহিত্য ও সংষ্কৃতি প্রেমী তালার সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলছেন,অঙ্কুরেই শেষ হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী তালার প্রাণের মেলা সিকান্দার মেলা।
এদিকে মেলার লাভ-ক্ষতির বিষয়টিকে সামনে রেখে তালাবাসীর মনে নতুন করে নানা আশংকা জেকে বসেছে। তাদের ধারণা,পুরনো পথেই নতুন করে এগিয়ে চলেছে সিকান্দার মেলা।
সূত্র জানায়,উপজেলার সবুজ শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তেঁতুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দু’টিকে সামনে রেখে অনুমোদিত মেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠকে সম্পৃক্ত করলেও বাইরে রাখা হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি। আর মেলার মূল আয়োজন থাকছে কবি পরিবারেরই নিজস্ব ফসলি প্রান্তরে। এতে মাঠ ইজারার টাকা প্রাপ্তির বিষয়টি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। সূত্র আরো জানায়,এবার মেলার মূল মাঠ বিক্রি হয়েছে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায়। তবে মেলা কেন্দ্রিক আয়ের এত উৎস্য তৈরী হলেও তা কবির স্মৃতি রক্ষা বা বর্তমান প্রজন্মের কাছে সিকান্দার আবু জাফরকে পৌছে দিতে মূলত কোন প্রভাব ফেলেনি।
এদিকে দেশের একজন বরেণ্য কবির নামে শুরু হওয়া মেলাকে ঘিরে শুরু থেকেই রয়েছে নানা অভিযোগ। মেলায় আগত যাত্রা গান,পুতুল নাচে সংস্কৃতির নামে চলে অশ্লীল উদোম নৃত্যের মহোৎসব। রয়েছে জুয়ার আসর থেকে শুরু করে অসামাজিক নানা আয়োজন। এজন্য কতৃপক্ষ দর্শক আকর্ষণকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বরাবর। তবে এবার মেলায় যাত্রা,পুতুল নাচ,সার্কাস,নাগর দোলা সহ বাহারি পসরায় দোকানিদের আগমনেও দর্শক সমাগম করতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে,লটারীসহ অসামাজিক নানা ঘাটতি মেলায় দর্শক শূণ্যতার কারণ। তবে এলাকাবাসী বলছেন ভিন্ন কথা,তাদের দাবি অশ্লীলতাই শূণ্যতার জন্য দায়ী। সিকান্দার মেলায় সিকান্দারকে নিয়ে কোন আয়োজন নাথাকায় ভিঁড় নেই বর্তমান প্রজন্মের জ্ঞাণপিপাসুদের। এলাকাবাসীর আশংকা,এমনটি চলতে থাকলে অনেক ঐতিহ্যবাহী মেলার ভীঁড়ে হারিয়ে যাবে প্রাণের সিকান্দার মেলাও।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়,প্রথমত কবি পরিবারের পক্ষে ২০০১ সাল হতে ১৬’ পর্যন্ত মেলা চালিয়ে গেলেও ব্যাপক গণ দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সাল থেকে প্রথম বারের মত সরকারিভাবে কবির জন্ম বার্ষিকীকে সামনে রেখে চালু হয়েছে সিকান্দার মেলার আয়োজন।
এলাকাবাসী আরো জানায়,মেলাটির শুরুতে ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে আবাল,বৃদ্ধ,বণিতাদের ব্যাপক সমাগম পরিলক্ষিত হলেও বর্তমানে অশ্লীলতা নির্ভর মেলা রীতিমত দর্শক হারাতে বসেছে।
প্রসঙ্গত,৯ মার্চ জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে স্থানীয় এমপি’র উদ্ভোধনকৃত মেলায় আগত অতিথিবৃন্দ এবারের আয়োজনে সকল অশ্লীলতা ও জুয়াকে বর্জনের ঘোষণা দিলেও বন্ধ হয়নি অশ্লীলতা। তবে বৃহস্পতিবার রাতে জুয়ার কার্যক্রম শুরু হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় তা।
সূত্র জানায়, যশোরের জনৈক লটারী বোর্ডের মালিক সাইফুল মেলা ইজারাদার বিল্লাকে ইতোমধ্যে আয়ত্বে নিয়ে লটারী চালুর পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, নীরব দূর্ভিক্ষের জনপদে মেলার আয়োজনে লটারী নামক জুয়ার সম্পৃক্তায় অর্থনীতিতে মারাতœক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি থেকে শুরু করে অসামাজিক কার্যকলাপ। বাড়তে পারে দাম্পত্য কলহ থেকে শুরু করে নানা সামাজিক সমস্যা। বিশেষ করে লটারী জেতার আশায় গতবার এনজিও থেকে লোন,গবাদি পশু থেকে শুরু করে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম ভ্যান বিক্রির ঘটনাও ঘটেছিল।
মেলার সদস্য সচিব শেখ মোসফিকুর রহমান মিলটন’র কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপ-কমিটি ও স্থানীয় সমন্বয়কারী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। এ বছর লটারি আসার কোন সুযোগ নেই।
মেলার মাঠ ইজারাদার সাইফুল ইসলাম জানান, মেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছেন। জুয়া বা লটারী চালু না করলে কোন ভাবেই তার লগ্নির টাকা উশুল হবেনা বলে দাবী করেন তিনি।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান, মেলায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা তিনি বা পুলিশ সমর্থন করেনা। যেভাবে মেলার অনুমোদন হয়েছে,তার বাইরের কোন অবৈধ আয়োজন তিনি ক্ষমা করবেননা।