দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি : সুন্দরবনে বাঘ জরিপে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ মার্চে শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা ছিলো ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ফলাফল ঘোষণার। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আগস্টেও জরিপের ফলাফল দিতে পারেনি বন বিভাগ। সকল প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা হতে পারে। নতুন সরকারের বন মন্ত্রণালয় থেকে এ ফলাফল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, জরিপ শেষে পর্যালোচনার কাজে সময় লেগেছে। এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। বন মন্ত্রণালয় দিন নির্ধারণ করে ফলাফল ঘোষণা দেবে। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইন্টারনেট সমস্যা সৃষ্টি, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে জরিপ তথ্য পর্যালোচনায় সময় লাগে। এখন সবই ফাইনাল পর্যায়ে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরই সব কিছু চূড়ান্ত হবে। তিনি আরও বলেন, জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিং রিমেল আঘাতের আগেই সম্পন্ন হয়। কিন্তু ফলাফলে রিমেলের আঘাতের কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ বাঘ সাঁতার কাটতে পারে। তাই রিমেলের প্রভাবে সুন্দরবন তলিয়ে গেলেও বাঘের কোনও ক্ষতির আলামত পাওয়া যায়নি। মৃত হরিণ পাওয়া গেছে ১৩৯টি। বাঘ সুরক্ষায় সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে ১২টি টিলা স্থাপন করা হয়েছে। অভয়ারণ্যের বাইরে বিশেষজ্ঞরা আরও ১২টি টিলা ও স্থাপন করার চিন্তা করছেন।
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ২০১৮ সালের জরিপে বাঘ শনাক্ত হয় ১১৪টি। ২০২৩ সালের মার্চে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে বাঘ জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিং শেষ হয়। আর নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের পূর্ব অংশে ক্যামেরা ট্রাপিং শুরু হয়ে ২০২৪ সালের শুরুতে শেষ হয়। চলছে জরিপ পর্যালোচনার কাজ। বন বিভাগের তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনরে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান। ২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের প্রথম ক্যামেরা ট্রাপিং জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ক্যামেরা ট্রাপিং হয়। এ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১১৪টি। সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা। একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে। বাকি ২৫টি বাঘ হত্যা করেছে চোরাশিকারিরা।