ডেস্ক নিউজ : সুন্দরবনে জেলে বাওয়ালিদের প্রবেশে ‘বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট’ (বিএলসি) নবায়নপত্রে সরকারি রাজস্ব বাবদ ২৫ টাকা লেখা থাকলেও আদায় করা হয় এক হাজার টাকা। বনবিভাগের খুলনা রেঞ্জের ৫টি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এভাবে সরকারি রাজস্বের বাইরে ঘুষ হিসেবে টাকা নেওয়া হয়। বনবিভাগের ঘুষ আদায় বন্ধে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয় না বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন বনজীবীরা।
লিখিত অভিযোগে দেখা যায়, অনুমতিপত্র নবায়নে ২৫ মণ ধারণ ক্ষমতার প্রতিটি নৌকার জন্য ২৫ টাকা রাজস্ব সরকারি ভাবে নির্ধারণ করা। কিন্তু ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা তাঁদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে আদায় করছেন। যা সরকার নির্ধারিত রাজস্বের কমপক্ষে ৪০ গুণ বেশি।
তারা বলেন, নির্ধারিত রাজস্বের বাইরে টাকা দিতে না চাইলে বিএলসি আটকে রেখে নানা নিয়মের কথা শুনান স্টেশন কর্মকর্তাগণ। চাহিদা মতো টাকা না দেওয়ায় প্রায় শতাধিক বাওয়ালি বিএলসি নবায়ন করেননি।
সুন্দরবনের ওপর নিভরশীল জেলে বাওয়ালীরা অভিযোগে জানিয়েছেন, বনের নদী ও খালে মাছ, কাঁকড়া শিকার ও গোলপাতা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। প্রতি বছর মাছ ও কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হিসেবে গত ১ জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় বন বিভাগ। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেওয়া শুরু হয়েছে। বনবিভাগের বিভিন্ন স্টেশন থেকে জেলে ও বাওয়ালিরা পর্যায়ক্রমে বিএলসি নবায়ন করছেন।
বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন সংলগ্ন এলাকার তেজেন বৈদ্য, সবুজ মন্ডল ও পবিত্র মন্ডল জানান, তিনজনেরই বনের কাঁকড়া ধরার অনুমতিপত্র আছে। এ বছর অনুমতিপত্র নবায়নে বানিয়াখালি ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তাঁরাও এ টাকা দিয়েছেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমাদের বন-বাদায় কাজ করে খাতি হয়। তাই সাহেবরা (বন কর্মকর্তা) যে টাকা চায়, তাই জোগাড় কইরে দিতি হয়। না দিলি বাদার মধ্যি নানা হয়রানীর শিকার হতি হয় আমাগের।’
একই এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রকান্ত মন্ডল বলেন, গত বছর থেকে বানিয়াখালি ফরেস্ট স্টেশনে বাৎসরিক অনুমতিপত্র নবায়নে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। অথচ অনুমতির কাগজে ২৫ টাকা লেখা থাকে। বেশি টাকার ব্যাপারে জানতে গেলে ঝামেলায় পড়তি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজস্ব বাবদ ২৫ টাকার পরিবর্তে ঘুষ হিসেবে এক হাজার টাকা নেওয়ার প্রচলন ৫টি ফরেস্ট স্টেশনের সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বন কর্মকর্তা আবু সাঈদ নিজে। তিনি বর্তমানে সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কাগাদোবেকী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
বন কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ‘রাজস্বের বেশি টাকা নেওয়া হয়, এটা ঠিক। তবে জেলেদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হয় না। টাকা দিতে জেলেরা আপত্তিও করেন না। আমরাও জেলেদের সুযোগ-সুবিধা দেখি।’
জানতে চাইলে বানিয়াখালি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত রাজস্বের অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে এমন অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। শুনেছিলাম কেউ একজন এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, পরে জেনেছি সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওই স্টেশনের আওতায় মোট ৫২২টি বিএলসি রয়েছে। তবে এবার কতটি বিএলসি নবায়ন হয়েছে এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্টেশন কর্মকর্তা।