ইমতিয়াজ উদ্দিন, কয়রা : জলে কুমির আর ডাঙায় শুধু বাঘই নয় আছে বনদস্যু । এসকল ভয় উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গহীন জঙ্গলে প্রবেশ করে গাছে গাছে মৌচাক খুঁজে বেড়ান মৌয়ালরা। এরপর কালো ধোঁয়ায় মৌমাছি তাড়িয়ে চাক কেটে মধু ও মোম সংগ্রহ করেন তারা।এর মধ্যদিয়েই মৌয়ালীদের পথ চলা। আর এসব মেনে নিয়েই গত পহেলা এপ্রিল থেকে সুন্দরবন এলাকায় শুরু হওয়া মধু আহরণ মৌসুমে মধুর খোঁজে মৌয়ালরা প্রবেশ করতে শুরু করেছে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে। মৌয়ালদের অভিযোগ, সুন্দরবনের বাঘ, কুমিরের মুখ থেকে রেহাই পেলেও রেহাই পাওয়া যায় না মানুষ রুপী ভয়ংকর বনদস্যুদের হাত থেকে। বনদস্যুদের চাঁদা না দিলে আহরিত মধু লুটসহ অপহরণের শিকার হন তারা। তবে, চলতি মৌসুমে নিরাপত্তায় বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১লা এপ্রিল থেকে শুরু করে ৩১ মে পর্যন্ত মধু ও মোম আরহণ চলবে। মৌয়ালরা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) এবং পাস পারমিট নিয়েই বনে যাচ্ছে। তারা একবার পাস নিয়ে বনে থাকতে পারবে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত। এর পর আবারও ২ সপ্তাহের পাস নিয়ে পুনরায় বনে ঢুকতে হবে। সুন্দরবন তীঁরবর্তি মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনের মৌয়ালরা হতদরিদ্র ও অশিক্ষিত হলেও তারা মধু আহরণ করে থাকে নিপুন হাতে। মৌয়ালরা ছোট-বড় দেশীয় নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে দলবদ্ধভাবে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে যায়। সাধারনত মধু আহরণে একটি গ্রুপে সাতজন করে থাকেন। একজন রান্নাসহ নৌকা পাহারা দেন, অন্যরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে মৌচাক খুঁজতে নানা সরঞ্জাম নিয়ে মৌমাছির পেছনে ছুঁটে চলে। তারা মৌচাক খুঁজে পেলে ‘কু’ শব্দ করে সংকেত দেয়। তখন দলের অন্যরা সেখানে পৌঁছায়। এরপর তারা মাথায় গামছা বা কাপড় বেঁধে খড়-কুটার ‘উকো বা তড়পা’ দিয়ে আগুনের ধোঁয়া সৃষ্টি করে। তখন মৌচাক থেকে মৌমাছিরা পালিয়ে যায়। এরপর চাক থেকে মধু ও মোম আহরণ করা হয়। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পশ্চিম বন বিভাগ থেকে মধু ১৭৫০ কুইন্টল ও ৪৪০ কুইন্টল মোম আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে । এর মধ্যে খুলনা রেঞ্জে মধু ৭০০ কুন্টল ও ১৭৫ কুইন্টল মোম এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ১০৫০ কুইন্টল এবং ২৬৫ কুইন্টল মোম। মৌয়ালদের নিরাপত্তার বিষয়ে খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক(এসিএফ) এস এম শোয়াইব খান বলেন, মৌয়ালদের নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবনে বনজীবি মৌয়ালরা মধু আহরণে বনের ভিতর নিবিঘেœ চলাচল করতে পারে তার জন্য প্রশাসনিকভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের (ডিএফও) মোঃ বশিরুল-আল মামুন বলেন,এ বছর দুই সপ্তাহের জন্য মধুর পারমিট দেওয়া হয়েছে। যাতে দির্ঘ দিন কোন মৌয়ালী সুন্দর বনে থেকে কোন অপরাধ না করতে পারে।