সুন্দরবনে শুরু হয়েছে মধু আহরণ মৌসুম

প্রকাশঃ ২০২৩-০৪-০২ - ১০:৩৩

শরণখোলা ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সুন্দরবনে শুরু হয়েছে মধু আহরণের মৌসুম। শনিবার শেষ বিকেলে শরণখোলায় তিন শতাধিক মৌয়ালী মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে যাত্রা করেছে। এদিন মৌয়ালদের বনের শরণখোলা ষ্টেশনসহ অন্যান্য স্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) দেওয়া হয়েছে। বনবিভাগ এ বছর ৮শ’ কুইন্টাল মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৫ মার্চ থেকে আগাম মধু আহরণ মৌসুম শুরুর ঘোষণা করেছিলো বনবিভাগ। ঐ সময়ে বনে মধু পাওয়া যাবেনা আশংকায় মৌয়ালরা বনে যায়নি। আগের নিয়মে মৌয়ালগণ সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য ১ এপ্রিল শরণখোলা স্টেশনসহ অন্যান্য স্টেশন অফিস থেকে পাস (অনুমতিপত্র) সংগ্রহ করেন। ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন মাস পর্যন্ত মৌয়ালগণ বনে মধু সংগ্রহ করবেন। মৌয়ালদের ১৪ দিনের করে পাস দেয়া হয়। শনিবার শরণখোলা স্টেশন থেকে ৩৩টি নৌকা পাস গ্রহণ করে।। শনিবার শেষ বিকেলে শরণখোলা স্টেশন থেকে মৌয়ালদের ৩৩টি নৌকার বহর গভীর বনের নির্দ্দিষ্ট গন্তব্যে রওয়ানা হয়ে যায়। শরণখোলার বগী গ্রমের মাহাবুল হোসেন, উত্তর সাউথখালী গ্রামের মৌয়াল বাদশা শেখ জানান, তারা দীর্ঘ ২০/২৫ বছর ধরে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে আসছেন। প্রতিবার সুন্দরবনে যাত্রায় তাদের ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ করে বনে যেতে হয় গত বছর আশানুরুপ মধু না পাওয়ায় লোকসান হয়েছে এবছর বেশী মধু পাওয়া পাওয়া যাবে বলে ঐ মৌয়ালরা আশা প্রকাশ করেন।

শরণখোলা ফরেস্ট স্টেশন অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, সুন্দরবনে মধু আহরণের জন্য শনিবার ৩৩ টি নৌকা অনুমতি পত্র (পাস) গ্রহণ করেছেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এবছর সুন্দরবন থেকে ৮ শত কুইন্টাল মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় ৬ শত কুইন্টাল মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মৌয়ালরা ২৮৮ কুইন্টাল মধু সংগ্রহ করতে পেরেছিলো। মৌয়ালরা যাতে বেশি মধু সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য গত বছর থেকে মধু আহরণ মৌসুম ১৫ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে এবং মৌয়ালদের ১৫ মার্চ থেকে আগাম মধু সংগ্রহের পাশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ডিএফও জানিয়েছেন।

এদিকে আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, শনিবার ১ এপ্রিল দুপুর ১২টায় পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় মধু আহরণের মধ্য দিয়ে মধু মৌসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পশ্চিম বন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের পর মধু আহরণের অনুমতিপত্র বা পাস দেওয়া হয়। পাস নিয়ে মৌয়ালরা গভীর বনে চলে যাবেন মধু সংগ্রহ করতে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা পরিষদরে চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন, সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক একেএম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, খুলনা সার্কেল এর দক্ষিণ বিভাগের এসিএফ মিহির কুমার।

সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে নির্বিঘ্নে মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া এবার বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য মৌয়ালদের সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, এ বছর সুন্দরবনে তিন হাজার কুইন্টাল বা তিন লাখ কেজি মধু ও ৮০০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগের ১৭৫০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৪০ কুইন্টার মোম সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৫০ কুইন্টাল মধু ও ২০০ কুইন্টাল মোম আহরনের জন্য নির্ধারন করা হয়েছে।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায়। বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০২১ সালের মধু ও মোম আহরণের জন্য এক হাজার ১২টি অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়। এসব অনুমতি পত্রের বিপরীতে ৬ হাজার ৭৯৭ জন মৌয়াল সুন্দরবনে যান। তারা ৩ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯০ টন মধু ও ১১৩ দশমিক ০৯ টন মোম আহরণ করেন। আর মধু থেকে ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৩ টাকা ও মোম থেকে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়।

২০২২ সালে সুন্দরবনের মধু থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং মোম থেকে ১৫ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা। সে বছর সুন্দরবন থেকে ২ হাজার ৩২০ কুইন্টাল মধু ও ৬৯৬ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়।