ইমতিয়াজ উদ্দিন, কয়রা : পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি সুন্দরবনে ‘জঙ্গল করতে’ গিয়ে আর ফিরে আসেনি। বাঘের আক্রমণে দিতে হয়েছে প্রাণ।‘জঙ্গল করা’ মানে সুন্দরবনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা। খুলনার সর্বদক্ষীনে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলায় বাঘের কারণে স্বামী হারা এই বিশেষ ধরনের বিধবাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট’ (আইসিডি)।
চলমান করোনাভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়া বাঘ বিধবা ৩৩টি অসহায় পরিবারের মধ্যে খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে আইসিডি টিমের সদস্যরা। ৪ মার্চ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীদের তৈরি করা খাদ্যের প্যাকেট পৌঁছে দেয়া হয় উপজেলার গোবরা, ঘিাটাখালী, ঝিলিয়াঘাটা ও ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের বাঘ বিধবা পরিবারগুলিতে।
আশিক, ফরহাদ, বাদশা, হায়দারদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গঢ়ে ওঠা ছোট এই সংগঠন স্বল্প অর্থায়নে বাঘ বিধবাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেয় চাল, ডাল, আলু, লবণ, তেল, মাক্স ও সাবানের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য।
উপকূলীয় কয়রা উপজেলার অধিকাংশ বাঘবিধবার দিনমজুরি করে দিন কাটে। অনেকেই পান না সরকারি কোনো ভাতা। বর্তমান করোনা-আতঙ্কে তারা অনেকটাই গৃহবন্দী। তাই দৈনিক আয়ের এই মানুষগুলো বড় বিপদে আছে। তাদের ঘরে খাবার নেই, রোগ হলে ওষুধ কেনার টাকাটাও নেই।
আইসিডির সেচ্ছাসেবকদের সাথে খাদ্যসামগ্রী দিতে যেয়ে কথা হয় ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের বাঘ বিধবা গোলজান বিবির সাথে। তিনি বললেন, তার স্বামী সোবহান গাজী প্রতিদিন নদী পার হয়ে সুন্দরবন যেতেন মাছ ধরতে।তাদের সংসার চলত সুন্দরবনের মাছ বিক্রি করে। ২০১৩ সালের জুন মাসের এক দিন সুন্দরবন থেকে স্বামী বাড়ি ফেরেননি। খবর পেয়ে গ্রামর মানুষ বনে ছুটলেন। দেখলেন, বাঘের পায়ের চিহ্ন, আর ছোপ ছোপ রক্ত। রক্তের দাগ ধরে দল বেঁধে বনে ঢুকলেন। বিকেল নাগাদ তাঁরা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষের একটি মাথা পেলেন। পরদিন গ্রামবাসী দল বেঁধে আবার বনে গেলেন। শরীরের বাকি কিছু অংশ পেলেন। যা পাওয়া গেল, তা-ই বাড়ির একপাশে কবর দিলেন। সেই থেকে বিধবা হলেন গোলজান বিবি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইসিডির জরিপ বলছে, কয়রা উপজেলায় গোলজার বিবিদের মত এ রকম বিধবা আছেন সাড়ে সাত শর মতো।
আইসিডির প্রতিষ্ঠাতা মো. আশিকুজ্জামান বলেন, সুন্দরবনে মাছ, মধু ও কাঠ সংগ্রহ করতে যেয়ে যেসকল জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়াল বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন তাদের স্ত্রীরা করোনা বিপর্যয়ের কারণে ছেলেমেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিল। আইসিডি সদস্যরা বাঘ বিধবাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসায় স্ত্রীদের কারণে তাদের স্বামীকে বাঘে খেয়েছে এমন কুসংস্কার আর অপবাদ মাথায় দিনাতিপাত করা বাঘ বিধবাদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে।
আশিক আরো বলেন, আমরা সংগঠনের সদস্য ও শুভাকাংঙ্ক্ষিদেরর মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করে বাকি বাঘ-বিধবা পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সামনের দিনগুলোতেও আমরা তাঁদের পাশে থাকব।