জয় মহন্ত অলক, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের পাশাপাশি সাধারণ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে দলীয় চেয়ারপারসনের রায় ঘোষণার দিনও শোডাউন করতে পারেনি বিএনপি।
অপরদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আংতঙ্কে হঠাৎ গাঁ ঢাকা দিয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের পর কেন্দ্রীয় ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পুলিশের বাধাঁয় পন্ড হয়ে যায়। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তৈমুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মির্জা ফয়সল আমিনসহ গুটি কয়েক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। গ্রেফতারের ভয়ে বাকি অঙ্গসংগঠনের উল্লেখ যোগ্য কোন নেতাকর্মী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আসেনি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ভয়ে বাড়ির ছাদে পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। নামে বিক্ষোভ সমাবেশ হলেও তারা করছেন গোপন সমাবেশ। আর বাকি উপজেলাগুলোতে কোন ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি বা সমাবেশ পালন করতে পারেনি বিএনপির নেতা কর্মীরা।
সদর উপজেলা বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সুবিধাবাদি। এতদিন আমাদের ব্যবহার করেছে বিভিন্ন বিক্ষোভ, সমাবেশে অংশ গ্রহন করে মামলা ও জেল হাজতে গিয়েছি। কিছুদিন খোঁজ খবর নেওয়ার পর তারা কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করে না। মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে আমরা এখন পঙ্গু। কিন্তু দলকে ভালবাসি বলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবারো আন্দোলনে নামতে রাজি আছি।
জেলা বিএনপির নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরেক নেতা বলেন, পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারি না। নিয়মিত পুলিশি অভিযানে আংতঙ্কিত আমরা সবাই । এছাড়াও তৃণমূল বিএনপির নেতা কর্মীরাও মামলার ভয়ে আজ ঘর ছাড়া। গণতন্ত্র নেই এ দেশে, সাধারন মানুষ মনের কথা বলতেও পারে না ভয়ে।
পুলিশ দশম জাতীয় নির্বাচনে ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ভাংচুর, প্রিজাইডিং অফিসার হত্যাসহ জালাও পোড়াওয়ের দেড় শতাধিক মামলায় প্রায় ৪ হাজার নেতা কর্মীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ সময় মামলার অনেক আসামী দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। বর্তমানে তারা মামলার হাজিরা দিচ্ছেন নিয়মিত।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন জানান, সরকার পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ভাবে ব্যবহার করছে। আমরা প্রতিবাদ সভা, মিছিল ও দলীয় কার্যালয়ে পর্যন্ত আসতে পারি না। ইউনিয়ন পর্যায়ে তৃনমূল নেতাকর্মীদের প্রতিদিন বিনা কারনে গ্রেফতার করছে পুলিশ। কেন্দ্রীয় ঘোষনার উপর আমাদের পরবর্তী আন্দোলন নির্ভর করছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম এমপি জানান, আদালত সকল দিক বিবেচনা করে বেগম জিয়ার দূর্নীতির মামলার রায় দিয়েছে। বিএনপি আন্দোলনের নামে ইতিপূর্বে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। তাই ঠাকুরগাঁওসহ দেশে কঠোর অবস্থানে ও সকল নৈরাজ্য প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলের সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, এ জেলার সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তা ও সকল প্রকার সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ সদা প্রস্তুত আছে এবং থাকবে। নৈরাজ্য করতে বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না।