আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার করে সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে মোংলার পশুর নদী হয়ে খুলনায় যাওয়ার পথিমধ্যে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে একটি ফিশিং ভেসেল (মাছ আহরণ ও পরিবহণ জাহাজ) আটক করে বনবিভাগ। পরে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মাছসহ আটক এফ,ভি ম্যাটাডোর নামক কোটি টাকা মূল্যের জাহাজ ছেড়ে দিয়েছে বনবিভাগ। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে মোংলার সুন্দরবনের পশুর নদীর জয়মনি এলাকা থেকে আটক ওই জাহাজটির প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র দেখে জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো: শাহিন কবির জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসার সময় বৃহস্পতিবার ভোরে পশুর নদীর জয়মনিতে অভিযান চালিয়ে বনরক্ষীরা একটি ফিশিং ভেসেল (মাছ ধরার বড় জাহাজ) আটক করে। ওই জাহাজে বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল পরিমাণ (প্রায় ৭ টন) সামুদ্রিক মাছ ছিল। তিনি বলেন, সাগরে মাছ ধরার অনুমতি থাকলেও রিজার্ভ ফরেষ্টের (সুন্দরবন) ভিতরে চলচলের জন্য বনবিভাগের অনুমতি ছিলনা। এ কারণেই ওই ফিশিং ভেসেলটি আটক করা হয়। পরে কাগজপত্র (সার্ভে কাগজ, মেরিন ফিশারিজের অনুমতি পত্র) যাচাইয়ের পর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে ১৫ জন নাবিকসহ জাহাজ ছেড়ে দেয়া হয়।
চাঁদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে জরিমানা দেড় লাখ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের তদবিরের কারণে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ছেড়ে দিতে হয়েছে।
এদিকে এফ,ভি ম্যাটাডোর ফিশিং ভেসেলের (মাছ ধরা জাহাজ) মাষ্টার মোঃ এনায়েত হোসেন খান বলেন, আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের পশুর নদী হয়ে খুলনায় চলাচল করে আসছি। কিন্তু কখনো বনবিভাগের অনুমতি প্রয়োজন হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমাদের সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য মেরিন ফিশারিজের অনুমতি এবং মাছ ধরার জাহাজের সার্ভেসহ (সমুদ্রে চলাচলের রুট পারমিশন) আনুসাঙ্গিক সব কাগজপত্র রয়েছে। তারপরও হঠাৎ বৃহস্পতিবার ভোরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জাহাজসহ আমাদের নাবিকদের পাঁচ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। পরে জোর করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। ওই জাহাজে সাত হাজার কেজিরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ছিল বলে জানান মাষ্টার এনায়েত।
অস্ত্র দেখিয়ে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে চাঁদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদেরকে (মাছ ধরার জাহাজে থাকা নাবিকদের) সিগনাল দিয়ে গতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অস্ত্র তাক করেছিলাম।
চাদপাই সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠনের (সিএমসি) সহ-সভাপতি মো: শুকুরুজ্জামান হাওলাদার বলেন, বনবিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের কথা বলে আর লাভ কি? এখানে কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা দুর্নীতি ছাড়া কিছুই বুঝেন না।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান বলেন, মাছ বোঝাই একটি ফিসিং ধরার খবর আমি পেয়েছি। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত কোন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।