খুলনা : খুলনা গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল গৌরবের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার। এ উপলক্ষে শনি ও রবিবার দুই দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা চলছে। আয়োজনে যতটা দামামা বেজে উঠছে, ঠিক তার বিপরীতে বিষাদের ছোঁয়া। ৫০ বছরে পা রাখতে যাওয়া এ ঐতিহ্যবাহী স্কুলটি যেখানে আরো আধুনিকায়ণের কথা, সেখানে করুণ দর্শায় জর্জরিত। বয়সের ভারে আজ স্কুলটি নিজেই বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবুও সুনাম ধরে রাখতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে স্কুলটি চলছে। স্কুল ভবনটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়িগেট তেলিগাতী এলাকায় ১৯৬৭ সালে ৪ দশমিক ৪৪ একর জমির ওপর সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময়ে দ্বিতল বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হলেও কয়েক দফায় এটির সংস্কার হয়। কিন্তু এটি এখন সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকের বাসভবনটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে স্কুলের অবকাঠামোর অবস্থা খুবই নাজুক যে, মাথার ওপর ভাঙ্গা ছাদ, পলেস্তরা খসে পড়া দেয়ালের কক্ষে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন। স্কুল ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার পাশাপাশি এর প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সংকট আর শিক্ষক স্বল্পতার কারণেও শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। লাইব্রেরি থাকলেও লাইব্রেরিয়ান নেই। নিরাপত্ত প্রহরীর পদেও নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাবরেটরিও নেই। বর্ষা মৌসুমে স্কুলের ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদোগ নেই। হাজারো নেই নেই এর মধ্যে চলছে খুলনা অঞ্চলের এ শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার চিঠিপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু কার্যত তেমন কোন প্রতিকার হচ্ছে না।
একাধিকসূত্রে জানা গেছে, স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাড়ে চার কোটি টাকার একটি সুপারিশ ২০১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলেও কোন অগ্রগতি নেই। ৪৯ বছর আগে নির্মিত ভবনগুলো দিয়েই বর্তমানে স্কুলটির ১১৮৩ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এ স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীই দেশের বড় বড় পদে আসীন হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। কিন্তু ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে খুলনা সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের নাম জাতীয় পর্যায় খুব একটা পরিচিত নয়। যেমনটি পরিচিত ঢাকা সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুল। তবুও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে স্কুলটি অতীতের গৌরবময় সাফল্য ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থী-শিক্ষকগণ। দক্ষিণাঞ্চলের শেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হওয়ার গর্বিত দাবিদার এ স্কুলটির সীমাহীন সমস্যা সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
এদিকে সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে খুলনা সরকারি ল্যাবরটেরি হাই স্কুলে আগামীকাল ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়িগেটের অদূরে তেলিগাতিতে দুইদিনব্যাপী নানারকম অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের এ মিলনমেলা উপলক্ষে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু আয়োজনের লক্ষ্যে খুলনা ও ঢাকায় বিভিন্ন উপকমিটি কাজ করছে। ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে এরই মধ্যে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লে-কার্ড শোভা পাচ্ছে। দুই দিনব্যাপী সম্ভাব্য অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় স্কুলের ঘন্টার ধ্বনি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই সুবর্ণ জয়ন্তীর আগমনী বার্তার মধ্যে দিয়ে মূল পর্ব শুরু হবে। এ দিনের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় সঙ্গীত, সুবর্ণ জয়ন্তীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও থিম সং, শোভা যাত্রা, স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান, দেশাত্ববোধক গান এবং সন্ধ্যায় রয়েছে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে কনসার্ট। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় তথা শেষ দিনে সুবর্ণ জয়ন্তীর থিম সঙ দিয়ে দিনের সূচনা হবে। এর পর অতিথিবৃন্দের শুভেচ্ছা, স্মৃতিচারণ, দেশের গান, কবিতা পাঠ, সন্ধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আমন্ত্রিত শিল্পীদের নিয়ে বিশেষ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। এর পর রাতের আধারে হঠাৎ করেই মনমুগ্ধকর আতশবাজির মাধ্যমে সুর্বণ জয়ন্তীর যবনিকা ঘটবে।