খুলনা : দীর্ঘ ৫২ বছর পর খুলনা-কলকাতা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেন খুলনায় আসে এবং পরে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আগামী ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে এই রুটে। গতকাল থেকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের একটি আলাদা কাউন্টারে খুলনা-কলকাতা রুটের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ভারতীয় রেলওয়ের ১৬ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেন বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে খুলনায় এসে পৌঁছায়। খুলনা সদরের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান ও রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার খায়রুল আলমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুলনায় ট্রেনটিকে স্বাগত জানায়। ৪টা ২৫ মিনিটে ট্রেনটি আবার কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে ট্রেনটিতে কোনো সাধারণ মানুষ যাত্রী হতে পারেনি।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার খায়রুল আলম বলেন, যাত্রী বেশি হলে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে সপ্তাহে একাধিক দিন ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর ভ্যাট ও ট্রাভেল ট্যাক্স যোগ করার কারণে ভাড়া বেশি মনে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রুটগুলোয় ট্রেনের ভাড়া এমনই।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার জানান, আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে এই রুটে ট্রেন চলাচল করবে। সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার ট্রেন চলবে। কলকাতা থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে এসে বেনাপোল ও যশোর হয়ে দুপুর ১২টায় খুলনায় পৌঁছাবে। এরপর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে খুলনা থেকে ছেড়ে বিকাল ৬টা ১০ মিনিটে কলকাতা পৌঁছাবে।
তিনি জানান, ৮টি বগির এই ট্রেনটিতে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৪৫৬ জন। এর মধ্যে এসি সিট (কেবিন) ১৪৪ এবং ৩১২ টি এসি চেয়ার। ১৭৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা। ট্রেনটির এসি কেবিনের ভাড়া ২ হাজার টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকান্ড পরিচালিত হবে বেনাপোল ও কলকাতায়।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে কলকাতা রুটের ট্রেনের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার চালু করা হয়েছে। পাসপোর্ট ও ভিসা দেখিয়ে সেখান থেকে যাত্রীরা টিকিট কিনছেন। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মোট ২৭ জন যাত্রী টিকিট কিনেছেন।
চিকিৎসা, ভ্রমণ, কেনাকাটা ও ব্যবসায়িক কাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে খুলনা ও আশপাশের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন কলকাতা যাতায়াত করেন। সরাসরি ট্রেন চালুর ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেক কমবে। তবে টিকিট কিনতে আসা যাত্রী ইলিয়াস হোসেন ও সিরাজুল আলম বলেন, ট্রেনটি সপ্তাহে মাত্র এক দিনের পরিবর্তে একাধিক দিন চালানো প্রয়োজন। এছাড়া টিকিটের মূল্য অনেক বেশী। ভাড়া কমালে যাত্রীদের সুবিধা হবে।
প্রসঙ্গত, আগে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই রেল যোগাযোগ।