বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’র পূর্ণতা পায়নি তিন দশকেও

প্রকাশঃ ২০২৫-০৫-০৮ - ২২:৪১

তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা)// বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “স্মৃতিধন্য শ্বশুরবাড়ি” খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহিতে দীর্ঘদিনেও পূর্নতা পায়নি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স। প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এ প্রকল্পের উন্নয়নকাজ। ফলে রবীন্দ্র কমপ্লেক্স দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় দেশ-বিদেশী দর্শনার্থীদের। এবার রবীন্দ্রনাথের ১৬৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দক্ষিণডিহিতে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকমেলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে তৎকালীন খুলনা জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হক দক্ষিণডিহিতে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি অবৈধ দখলমুক্ত করেন। স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত হওয়ার পর সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০০ সালের ৮ আগষ্ট বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে। পরে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর দক্ষিণডিহিতে পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্র কমপ্লেক্ম নির্মাণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৯ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় এ বাবদ ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই টাকা দিয়ে ২০১২ সালের মাঝামাঝি ভবন সংস্কার, একপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া ও অন্যান্য কাজ শেষ করে। এর আগে দ্বিতল ভবনের সামনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়। এছাড়া সেই পুরানো সফেদা তলায় নির্মিত হয়েছিল মৃণালিনী মঞ্চ।

বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য শ্বশুরবাড়ির ভবন ঘিরে রবীন্দ্রনাথের কর্মময় জীবনের উপর সংগ্রহশালা কাম লাইব্রেরি, অডিটোরিয়ামসহ রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র, মানসম্মত রেষ্টহাউস নির্মাণের দাবি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও উপেক্ষিত রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, পিকনিক স্পট নির্মাণ, রবীন্দ্র কমপ্লেক্রে প্রবেশের ৩টি রাস্তা প্রশস্তকরণের দাবি। এছাড়া এখানে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে প্রস্তাবিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা ক্যাম্পাস বা স্বতন্ত্র ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বেজেরডাঙ্গা রেলষ্টেশনের নাম পরিবর্তন করে দক্ষিণডিহি রেলষ্টেশন এবং খুলনা-বেনাপোলগামী ট্রেনকে মৃণালিনী এক্রপ্রেস নামকরণও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বর্তমানে দৃশ্যমান কাজের মধ্যে শুধুমাত্র সীমানা প্রাচীর, মূল ভবনের সংস্কার ও রঙের কাজ, নিচতলায় অপূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরী, সংগ্রহশালা ও দর্শনার্থীদের অবসর যাপনের জন্য ছাউনী তৈরী ও টয়লেট নির্মিত হয়েছে।

দক্ষিণডিহিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুড়বাড়ী ২০১৫ সালের ১০ মে ‘দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি যাদুঘর’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১ এপ্রিল’ ২০১৫ থেকে দেশী ও বিদেশী দর্শণার্থীদের জন্য টিকিটের প্রচলন করা হয়। দেশী দর্শণার্থীদের ২০টাকা এবং বিদেশীদের জন্য ৫০টাকা টিকিটের মূল্য চালু রয়েছে।

এদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিসদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্ধোধন আজ (বৃহস্পতিবার)। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসনীম জাহান বলেন, প্রতি বছরের মতো রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা সভা, লোকমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে। এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষের উপস্থিতে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। অনুষ্ঠান স্থল ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে।