সকল যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সজাগ থাকতে হবে -মিয়া গোলাম পরওয়ার

প্রকাশঃ ২০২৫-০৩-১৮ - ১৮:৪১

তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা)// বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সাংবাদিক হলো জাতির চতুর্থ স্তম্ভ। যে দেশের গণমাধ্যম যত উন্নত সে দেশের সভ্যতা তত উন্নত। মানুষের রাজনৈতিক মত ভিন্ন থাকতে পারে কিন্তু দেশের স্বার্থ সবার আগে। হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করে সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তা না হলে ভুল তথ্যে দেশ গভীর সংকটে পড়তে পারে যা পতিত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে জাতি অবলোকন করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র -জনতা দেশকে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। কিন্তু ফ্যাসিষ্টদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সময়ের সাথে সাথে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশ ও এ দেশের স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সাড়ে ৭ মাসে ইতিমধ্যে জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার কান্ড, সচিবালয়ে আগুন, সংখ্যালঘু ইস্যুসহ বিভিন্ন আন্দোলনের নামে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল। এ অবস্থায় দেশ ও দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে সাংবাদিকদের অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করতে হবে।

বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময় সাংবাদিকদের উপর বিভিন্ন জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে গোলাম পরওয়ার বলেন, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেনি। সংগ্রামের প্রবীন সম্পাদক আবুল আসাদকে গেফতার, আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও আদালত চত্বরে রক্তাক্ত করা, বিএফইউজের সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন গাজীকে কারাগারে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে পতিত সরকারের দোসররা। এখন সময় এসেছে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার। এ সময় তিনি জামায়াতের ভুল কাজের সমালোচনা ও ভালো কাজ সঠিকভাবে তুলে ধরার আহবান জানান।

সিয়াম সাধনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, তাকওয়ার জন্য আসা রমজানের রোজা রাখার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে আরো বেশি আত্নসংযমী হতে হবে। গুনাহ মাফের এই মাসে আমাদের বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও সর্বদা তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দিনের বেলায় সিয়াম পালন ও রাতে কিয়ামের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হবে। মিথ্যাকে পরিহার করে সর্বদা সত্যকে ধারণ করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে ১লাখ রোহিঙ্গাদের সাথে জাতিসংঘ মহাসচিবের ইফতার ও বর্তমান সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ, দাতা গোষ্ঠী, উন্নয়ন সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে গড়তে এ সরকারের পাশে থেকে সহযোগিতা করতে চাইছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী একটি দেশ ও সে দেশের এবং আমাদের কিছু মিডিয়া দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বর্হিবিশ্বে নেতিবাচক ধারণার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় তাদের সত্য ও সঠিক লেখনির মাধ্যমে অপপ্রচারের জবাব দিয়ে বাইরের বিশ্বে আমাদের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতের বিভিন্ন সমাজ সংস্কার ও জনহিতকর কাজের বর্ণনা দিয়ে তিনি আরো বলেন, জনগণ যদি আমাদের রাষ্ট্র গঠনের দ্বায়িত্ব দেয় তাহলে আমরা শাসক হতে চাই না, সেবক হতে চাই। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। ইনসাফ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে দেশ চালাতে চাই। আমাদের আমীরে জামায়াত মানবিক নেতা ডাঃ শফিকুর রহমান ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফুলতলা উপজেলা শাখার আয়োজনে ফুলতলা সরকারি মহিলা কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সম্মানে দেয়া ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আঃ আলিম মোল্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মাওঃ ইমরান হুসাইন, সেক্রেটারী মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারী মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আজম হাদী, জেলা প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক শেখ সিরাজুল ইসলাম, বায়তুল মাল সম্পাদক হাফেজ আমিনুল ইসলাম। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওঃ সাইফুল হাসান খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওঃ শেখ ওবায়দুল্লাহ, খানজাহান আলী থানা জামায়াতের সেক্রেটারী গাজী মোর্শেদ মামুন, ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য শেখ আলাউদ্দিন, ড. মাওঃ আজিজুল হক, পেশাজীবি বিভাগের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফুলতলা ইউনিয়ন আমির মাষ্টার মফিজুল ইসলাম, জামিরা ইউনিয়ন আমির শরিফুল ইসলাম, সেক্রেটারী মোঃ মিজানুর রহমান, হাফেজ গাজী আলামিন, মাওঃ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও তিনি দেন। নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিনিমাম সংস্কারের মাধ্যমে একটি ফ্রি ফেয়ার এবং ক্রেডিবল নির্বাচনের জন্য যতটা সময় সরকারের প্রয়োজন আমরা সরকারকে তা দিতে চাই। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন যাতে ক্ষমতাসীনদের প্রভাবমুক্ত করা যায় জামায়াতসহ আরো কয়েকটি দল সেজন্য এ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে চায়। জোটভুক্ত নির্বাচন প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক কিছু রাজনীতির মাঠে হতে পারে। বিভিন্ন জোটভুক্ত হতে পারে আবার স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচনে হতে পারে। ইসলামী সমমনা দলসহ আরো কয়েকটি দলের সাথে আমাদের কথা হচ্ছে জোটের ব্যাপারে। এর সঠিক উত্তর আরো পরে জানা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।