মানছুর রহমান জাহিদ, খুলনার প্রতিনিধিঃ ঘুষ গ্রহণ ও পক্ষপাত মূলক প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগে খুলনার সিআইডি কর্মকর্তা অমিতাভ সন্যাসী’র শাস্তির দাবীতে সিআইডি’র অতিরিক্ত পুলিশ মহা পরিদর্শকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সুকুমার চন্দ্র কর্মকারের পক্ষে তার ছেলে পলাশ কুমার কর্মকার। লিখিত ওই অভিযোগে পাইকগাছা উপজেলার উত্তর সলুয়া গ্রামের সুকুমার চন্দ্র কর্মকারের ছেলে পলাশ কুমার কর্মকার উল্লেখ করেছেন, কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দিরকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে তার ঠাকুরদাদা গোষ্ট বিহারী কর্মকার ১০/১২/৯৫ সালে স্কুলের একটি দোকান ঘর বরাদ্দ নেন। পরবর্তীতে তার ঠাকুরদাদা ১৬/০৯/৯৯ ইং তারিখে পলাশের পিতা সুকুমার চন্দ্র কর্মকারকে ১৫০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পঙ্কজ কর্মকারের জ্ঞাতসারে লিখিত ভাবে হস্তান্তর করেন। তার ঠাকুর দাদা ঘরটি হস্তান্তর করার পর ১৭ বছরের জীবদ্দশায় কাকা পঙ্কজ কর্মকার উক্ত দোকান ঘরের কোন মালিকানা দাবী করেননি। তবে গোষ্ট বিহারী কর্মকারের মৃত্যুর পর সুকুমারের পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে পঙ্কজের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। আর সেই বিরোধের জেরে পঙ্কজ কর্মকার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট ওই দোকান ঘরের মালিকানা সংক্রান্ত অভিযোগ দিলে সুকুমার চন্দ্র কর্মকারকে বৈধ মালিকানার প্রতিবেদন প্রদান করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপর স্কুলের সভাপতি খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট একই অভিযোগ দিলে তৎকালীণ পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুনানী করে দোকান ঘরটির সম্পূর্ণ ও একক মালিকানা হিসাবে সুকুমার চন্দ্র কর্মকারের পক্ষে রায় দেন।
এরপর পঙ্কজ কর্মকার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হয়রানীর লক্ষ্যে গোষ্ট বিহারী কর্মকারের স্বাক্ষর জাল করার মিথ্যা অভিযোগ এনে তার বাবাসহ ২ জন স্বাক্ষীকে বিবাদী করে ৩০/১১/২২ তারিখে পাইকগাছা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং সি আর ১৩২৩/২২। এ মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে খুলনা মেট্রো এন্ড জেলা সিআইডির উপ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) অমিতাভ সন্যাসী (বিপি ৯১১৯২২৩১৯৫) দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
লিখিত ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১৪/১১/২৩ ইং তারিখে এস আই অমিতাভ সন্যাসী এ মামলার বিষয়ে নানা ভীতিকর কথা বলার পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবী করলে পলাশ কুমার কর্মকার তাকে ৪৫ হাজার টাকা দেন। এর কিছু দিন পর অমিতাভ সন্যাসী আরও ৩০ হাজার টাকা দাবী করলে পলাশ টাকা না দেয়ায় ওই তদন্ত কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ হয়ে মিথ্যা, মনগড়া ও পক্ষপাতমূলক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেন। যার ফলে তার পিতাসহ ২ জনকে হাজত বাস করতে হয়েছে। এদিকে পঙ্কজ কর্মকার কর্তৃক আনীত স্বাক্ষর জালের অভিযোগটি চুড়ান্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি খুলনা বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাব কর্তৃক তদন্ত কর্মকর্তা অমিতাভ সন্যাসীকে তার দেয়া দলিল-পত্রাদী ফেরৎ দেন এবং বাংলাদেশ সিআইডির খুলনা বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবের উপপুলিশ পরিদর্শক ও হস্তলিপি বিশারদ মোঃ বাবুল আকতার স্বাক্ষরিত “হস্তলিপি বিশারদের ফেরত প্রতিবেদন”-এ বলা হয় “বিতর্কিত স্বাক্ষরের সাথে তুলনামূলক পরীক্ষা করার জন্য আরো অধিক পরিমানে প্রামাণ্য/স্বীকৃত স্বাক্ষর প্রয়োজন। চুড়ান্ত পরীক্ষাসহ মতামত প্রণয়নের জন্য কিছু উপকরণসমূহ প্রেরণের জন্য বলা হলো।” কিন্তু ফরেনসিক বিভাগের এ তথ্যটি তদন্ত কর্মকর্তা অমিতাভ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন নি। এমনকি পলাশের পিতার পক্ষে আসা স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার রায়ের বিষয়টিও তার প্রতিবেদনে এড়িয়ে যান। সিআইডি’র এস আই অমিতাভ সন্যাসীর এহেন দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য শাস্তির দাবী করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এস আই অমিতাভ সন্যাসী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয় এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে যে অভিযোগ করা হয়েছে এটা আমি জানি না।