খুলনা ব্যুরো: খুলনা লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ সাবেক সভাপতির দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক—কর্মচারীদের হয়রানি ও বর্তমান শিক্ষার্থীদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রতিবাদে স্বারকলিপি প্রদাণ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ। রবিবার বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং মিছিলসহকারে বের হয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর বেলা চারটায় স্বারকলিপি প্রদাণ করেন। এ স্বারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর প্রদাণ করা হয়। অভিযোগসূত্রে জানা যায়, বিগত সরকার কর্তৃক মনোনিত লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি মোঃ আলী আকবর টিপুর ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক মো: বাদশা খান পাঁচ বছর এবং মোঃ গাউস উদ্দিন শিকদার পনেরো বছর পূর্বে লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেন। তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতার দাপটে সাধারণ শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্র— ছাত্রীরা তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়নি। এমনকি অন্যায়ের সামান্যতম প্রতিবাদ করলে গুম, চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন ধরনের ভয় ভীতি প্রদর্শন ও প্রভাবশালী মহলের নাম ব্যবহার করে লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে এসেছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরকে দিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজ করাতে বাধ্য করত তারা। অপারগতা প্রকাশ করলে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার করা হতো। একে অন্যের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানের আয়ের বিভিন্ন খাত হতে প্রাপ্ত অর্থ ফান্ডে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। তথ্য সূত্রে দেখা যায়, ১৪/০৮/২০২৪ থেকে ১৮/০৮/২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ফান্ড থেকে ৩,৩৬,৩০৪/= উত্তলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অন্য একটি তথ্যে দেখা যায়, ২৩/০৭/২০২৪ ইং তারিখে অগ্রণী ব্যাংক, মেডিকেল কলেজ শাখা, খুলনা (হিসাব নংঃ ০২০০০০৪৫০২৭৭) হতে ০৪৯৭৭১৫ নং চেকের মাধ্যমে ৭২,০০০ (বাহাত্তর হাজার) টাকা উত্তোলন করা হয় কিন্তু ফান্ডে জমা করা হয় মাত্র ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা। বাকী ৩২,০০০ (বত্রিশ হাজার) টাকা ফান্ডে জমা করেনি সংশ্লিষ্টরা। বেঞ্চ তৈরি করার জন্য ৫০,০০০ হাজার টাকা ফান্ড থেকে উত্তোলন করা হলেও বেঞ্চ তৈরি হয়নি এবং বিভিন্ন ভাউচার এর মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী গভর্ণিং বডির দাতা সদস্য হতে হলে প্রতি মেয়াদের জন্য ২০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা ফান্ডে জমা দিতে হয়। কিন্তু ২০২২ সালে গঠিত গভর্ণিং বডির দাতা সদস্য পদে সারফুজ্জামান টফিকে অন্তর্ভূক্ত করা হলেও তার কাছ হতে প্রাপ্ত অর্থ ফান্ডে জমা করা হয়নি। প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয়ে ডায়েরি তৈরি করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ হতে প্রতি ডায়রি বাবদ ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা আদায় করলেও আদায়কৃত অর্থ ফান্ডে জমা করা হয়নি। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত ক্লাস (কোচিং) থেকে প্রাপ্ত আয়ের ১০% টাকা ফান্ডে জমা করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ের ২০%— ৩০% টাকা গ্রহণ করলেও তা ফান্ডে জমা করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও হলরুম ভাড়া বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ হতে আয়কৃত অর্থ ফান্ডে জমা করা হয়নি। প্রতি বছর পরীক্ষার খাতা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ ফান্ডে জমা করা হয়নি। বিভিন্ন সালে গভর্ণিং বডি গঠনে কোন নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র বিক্রয়কৃত অর্থ ফান্ডে জমা করা হয়নি। কিন্তু ফান্ড থেকে ব্যয় দেখানো হয়েছে। অগ্রহণযোগ্য বিভিন্ন খাতে ব্যয় এবং অপ্রাসাংঙ্গিক ক্রয়মূল্যে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বেতনের বাহিরেও প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ফান্ড হতে প্রতি মাসে বেতন বাবদ প্রধান শিক্ষক ২৮,৪০০ টাকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক ১২,০০০ টাকা গ্রহণ করে, কয়েকজন জুনিয়র শিক্ষক ও অফিস সহকারীর বেতন ধার্য করা হয় ৫০০০—৬০০০ টাকা। অথচ অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা যা শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অবস্থানরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের কাছ হতে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২০২০ সাল থেকে এ যাবত লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করা হলেও তা ফান্ডে জমা করা হয়নি। এমনকি ২০১৮ সাল হতে শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম বিক্রয় ও এস. এস. সি পাশকৃত শিক্ষার্থীদের কাছ হতে প্রশংসা পত্র বাবদ গৃহীত অর্থ ফান্ডে জমা করা হয়নি।