ডুমুরিয়ায় পালিয়ে থাকার পর ফিরলেন আইসিটিডিটিআর প্রতিষ্ঠানের সুপারিনটেনডেন্ট

প্রকাশঃ ২০২৪-০৯-২৩ - ১০:১৯

#অফিসের তালা ভেঙ্গে দাপ্তরিক কাগজপত্র নেয়ার অভিযোগ

খুলনা ব্যুরো: খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সুপারিনটেনডেন্টসিকদার আব্দুল হালিম আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর গাঁ ঢাকা দিয়ে ছিলেন। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন গত ১৩ই আগষ্ট। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারি, দাপ্তরিক কাজে সেচ্ছাচারিতাসহ একাধিক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ২১শে সেপ্টেম্বর সুপারিনটেনডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে ডুমুরিয়ার সর্বস্তরের জনগণ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। এ আলোচনা সভায় স্থানীয় বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী নেতা কর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, তরুন—যুবসমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অংশগ্রহণ করেন। তার এ অপকর্মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর রবিবার একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন (০৫—০৮—২০২৪ ইং তারিখ) থেকে পালিয়ে ছিলেন আন্তর্জাতিক কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সুপারিনটেনডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিম। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গত ১৯—০৯—২০২৪ ইং তারিখে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুল মাষ্টার, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেম্বার সহিদ, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেম্বার বাহারুলসহ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতাদের সহযোগিতায় রাকিবুল ইসলাম ও আরো আনুমানিক ১২ জন লোকজন নিয়ে সকাল দশটার সময় প্রতিষ্ঠানের সম্মুখে জড় হয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন। এরপর অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান দাপ্তরিক কাগজপত্র ও জিনিসপত্রাদি নিয়ে যায়।
অন্য একটি অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুপারিনটেনডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিম নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকে আন্তর্জাতিক কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট মৃতঃ মোঃ আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নার্গিস বেগমেকে এডভান্সড ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (এ ডাব্লউ এফ) এর চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৃতঃ আলহাজ্জ এনায়েত হোসেন গাজী এবং তাদের পরিবারের সকলের সম্মতিক্রমে (আইসিটিভিটিআর এর সুপারিনটেডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিমের সাথে বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত) আয়ার কাজ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানে। উক্ত নার্গিস বেগমের সাথে সিকদার আব্দুল হালিম নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকেই জোরপূর্বক অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে। পরবর্তীতে ঘটনাটি জানাজানি হলে তাকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে ছাড়াছাড়ি হয়ে পুনরায় আবারও বিয়ে করেন। সুপারিনটেনডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিমের উক্ত ঘটনা জানাজানির ফলে স্ত্রী ও সন্তানেরা তার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। অন্যদিকে মৃতঃ কাদের সাহেবের সন্তানেরা তার মায়ের এ সমস্ত অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য তারা বাড়িতে থাকে না এবং তারা তার মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। তাছাড়া সুপারিনটেনডেন্টন্ট সিকদার আব্দুল হালিম মৃতঃ কাদের সাহেবের সন্তানদেরকে বিভিন্নভাবে লোক মারফত হুমকি দিয়েছেন। শিক্ষকবৃন্দরা জানান, তার এই অসামাজিক কার্যকলাপ, পরীক্ষা কেন্দ্রের অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাদেরকে হেনস্তা করতো এবং চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী সিকদার আব্দুল হালিমের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও তার অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারি, কাজের সেচ্ছাচারিসহ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের দাবি করে অভিযোগও করেন। কিন্তু তাতে কোন কাজই হয়নি। সরকার পতনের পর সে পালিয়ে ছিলো। হঠাৎ করে সে ফিরে এসে দাপ্তরিক কাগজপত্র নিয়ে যায় অফিসের তালা ভেঙ্গে। স্থানীয় অভিযোগকারীরা জানান, জৈনক রাকিবুল ইসলাম নামক একজন ব্যক্তি সুপারিনটেনডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিমকে শেল্টার দিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। রাকিব বলেছেন আর্মি ক্যাম্প ইনচার্জ তার পরিচিত। আর ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার ঘনিষ্ঠজন। ডুমুরিয়া উপজেলায় কোন মব জাস্টিস হচ্ছে কিনা সেগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাকি রাকিব সাহেবকে দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে জৈনক রাকিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এলাকার একজন শিক্ষক এস এম হুমায়ুন কবির স্বপণ জানান, সুপারিনটেনডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিম ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত। তাকে বার বার সতর্ক করেছে এলাকাবাসী। কিন্তু তিনি কোনো কিছুই পরোয়া করেননি। তিনি এখনো ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চলছেন। অবশেষে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছে। সুপারিনটেনডেন্ট সিকদার আব্দুল হালিমের সাথে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সত্য মিথ্যা যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জৈনক রাকিবুল ইসলামের বিষয় তিনি বলেন, রাকিব নামক কোন ব্যক্তিকে আমি চিনি না ও তার কর্মকান্ডের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।