খুলনার রূপসায় সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে ২৫ চাষির ভাগ্যবদল

প্রকাশঃ ২০২৩-১২-০৮ - ১৬:৫৭

ইউনিক প্রতিনিধি,রুপসা: খুলনার রূপসায় উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে ভাগ্যবদল হয়েছে রূপসার ২৫ ক্লাস্টার মাছ চাষির। পানিতে মাছ আর ঘেরের বেড়িতে সারি সারি টমেটো গাছের বাম্পার ফলনসহ সবজি চাষের অপরূপ দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (১ম সংশোধিত) এর মাধ্যমে ২৫ জন চাষির ২৫টি ঘেরের ৬ দশমিক ৬৬ হেক্টর জমিতে উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে এই গলদা চিংড়ি চাষ শুরু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ঘের মালিক নিজ খরচে ঘের খনন ও বেড়ি তৈরি করেন। এরপর থেকে আর তার আর্থিক ব্যয় করতে হয়নি। ওই ঘেরে মাছ চাষের উপযোগী করাসহ জলাশয়ের আয়তন মোতাবেক প্রয়োজনীয় গলদার রেণু প্রকল্প থেকে প্রদান করা হয় বিনামূল্যে। এক বছর মেয়াদী এ প্রকল্প নিয়মিত তদারকি শেষে এখন ঘের থেকে মাছ তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র মতে, প্রথম ধাপে ওই ঘের থেকে ৪৮০ কেজি গলদা তুলে বিক্রি করা হয়েছে। যার বিক্রি মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা। গত রবিবার ২৫টি ঘেরের মালিকদের নিয়ে গঠিত কমিটির সভাপতি ওই গ্রামের মোঃ আনছার আলী মোড়লের ঘের থেকে প্রথম ধাপে ৭৮ কেজি গলদা চিংড়ি ৩০ কেজি মাছ ধরা হয়। যা বিক্রি করা হয়েছে ৫৯ হাজার টাকা। মৎস্য চাষি আনছার আলী বলেন, ‘উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চাষের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রথমদিকে মৎস্য অফিসের বাপী স্যার আমাদের বললে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। তারপরও তার কথামত ঘেরের মাটি খনন, রেড়ি তৈরি ও বেড়িতে সবজি খামার করা বাবদ এক লাখ টাকা খরচ করি। মৎস্য অফিসের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় এখন ভালো ফল পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, আমার ঘের খননের পর সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘেরের জন্য ১৫৪ কেজি ৫০০ গ্রাম চুন, ২০৬ কেজি ব্লিচিং পাউডার, ৯২৭ কেজি ৫০০ গ্রাম চিংড়ির খাদ্য, ৪৬ দশমিক ৩৫ কেজি মোলসেস, ৩৬ কেজি চালের কুড়া, শূন্য দশমিক ৪১২ কেজি ইষ্ট পাউডার, শূন্য দশমিক ৪১২ কেজি প্রোবায়োটিক ও ২০ হাজার ৬০০ পিস গলদার রেণু দেওয়া হয়। মৎস্য অফিসের মাধ্যমে বিনামূল্যে এসব সাপোর্ট না পেলে এতটাকা ব্যয় করে ঘের করা কোনভাবেই সম্ভব ছিলো না। মৎস্য অফিসের সূত্রে জানা গেছে, দুই হাজার ৪৬৬ কেজি চুন, ৩ হাজার ২৮৮ কেজি ব্লিচিং পাউডার, ১৪ হাজার ৮০৩ দশমিক ৩২ কেজি চিংড়ি খাদ্য, ৭৩৯ দশমিক ৮ কেজি মোলাসেস, ৫৭৫ দশমিক ৪ কেজি চালের কুড়া, ৬ দশমিক ৫৭৮ কেজি ইষ্ট পাউডার, ৬ দশমিক ৫৭৮ কেজি প্রোবায়োটিক, ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ পিস গলদা রেণু, ১ সেট মাটি ও পানি পরীক্ষার কীট/যন্ত্র, ১টি পোর্টেবল পিসিআর মেশিন, ৫টি রেজিস্ট্রার, ১টি সাইনবোর্ড ও ২টি ডিজিটাল স্কেল চাষিদের বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বাপী কুমার দাস বলেন, সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (১ম সংশোধিত) এর আওতায় রূপসা উপজেলার দক্ষিণ খাজাডাঙ্গা গ্রামে ২৫টি ঘেরের সমন্বয়ে চাষি ভাইয়েরা নিজেদের অর্থায়নে ঘের সংস্কার, ঘেরের পাড়ের প্রশস্থতা ও নার্সারীর আয়তন বৃদ্ধি করেন এবং বায়োসিকিউরিটি মেইনটেইন করেন। আমাদের প্রজেক্ট থেকে চাষকালীন সময় মাছের পোনা, খাদ্য, প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক প্রদান করা হয়। যার ফলে মাছ চাষ করে ২৫ জন চাষির দারিদ্রতা নিরসন হয়েছে।