সরেজমিন প্রতিবেদন
মুখ থুবরে পড়েছে কেসিসি,মাঠে শিক্ষার্থীরা
মো. আরিফুর রহমান: সরকার পতনের পর দেশব্যাপি আইন—শৃঙ্খলা মুখ থুবরে পড়েছে। কিন্তু সারাদেশে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে ছাত্র—জনতা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন। খুলনা মহানগরীও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রধান সড়কে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা গেছে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন সদস্যদের। অন্যদিকে, আবর্জনার স্তুপগুলো থেকে আবর্জনা সরাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব প্রাপ্তরা। ফলে নিরালা মোড়সহ কয়েকটি জায়গায় ময়লার স্তুপ তৈরী হয়েছে। খুলনা মহানগরীর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা না থাকায় ছাত্ররা যানজট নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সড়কে যানজট কমাতে অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য কয়েকটি লেনে ভাগ করে দিয়েছেন তারা। মোটরসাইকেল চালাতে হেলমেট পরতেও সতর্ক করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক ঘুরে শিক্ষার্থীদের এমন তৎপরতা দেখা গেছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ট্রাফিক পুলিশসহ তারা আর কাজে ফেরেনি। এতে খুলনার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানজট দেখা দেয়। সড়কগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠলে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজে নেমে পড়েন। পাশাপাশি সড়কে হওয়া ভাঙচুরের স্তুপ পরিস্কার করেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার, বুধবার মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে দেখা যায়, যান চলাচল বেড়েছে। ময়লাপোতো সড়কেও দেখা যায়, যান চলাচল বেড়েছে। রূপসামুখী যানগুলোকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে যেতে সাহায্য করছেন সাধারন শিক্ষার্থীদের একটি দল। তারা ইজিবাইকগুলোকে যথাস্থানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করতে অনুরোধ করছেন। সড়কের অপর পাশে নিরালা ও শিববাড়িমুখী পরিবহণগুলোকে যেতে একইভাবে কাজ করছেন শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল। নগরীর আযমখান কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ, নুসরাত ও ইমন জানান, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় আমরা দায়িত্ব নিয়ে সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন, সড়কের আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। গতকালও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী জানান, আমরা একটি সুশৃঙ্খল দেশের জন্য জীবন দিয়েছিলাম। আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে দেশ গড়ে তুলব। ব্যাংকে কর্মকর্তা শারমিন রুম্পা বলেন, দু—তিনদিনে যে অবস্থা হয়েছিল! আজকে একটু স্বাভাবিক। আমাদের গৌরবের ছাত্ররা রাস্তায় কাজ করছে। তাদের নিয়ন্ত্রনে শৃঙ্খলা আবার ফিরে এসেছে। ময়লাপোতা মোড়ের একজন ব্যবসায়ী আলেয়া খাতুন বলেন, পুলিশ থাকলে শৃঙ্খলা থাকে। তারা এখন না থাকলেও ছাত্ররা আছে বলে ব্যবসা করতে পারছি। কারো কোন সমস্যা হলে ছাত্ররা দৌড়ে যাচ্ছে। এমন একটা দেশেরই দরকার আমাদের। যেখানে একজনের বিপদে সবাই দৌড়ে যাবে।
সোনাডাঙ্গা থানার বাসিন্দা আসলাম হাওলাদার বলেন, দিনে ছাত্ররা কাজ করছে। রাতে আমরা এলাকা পাহাড়া দিচ্ছি। ভাগে—জোগে কাজ করছি। আইন—শৃঙ্খলা ঠিক হওয়া অব্দি আমাদের দেশের দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। একে অপরকে সাহায্য—সহযোগিতার এ বন্ধন চিরস্থায়ী হোক।