এফএইচ সজিব: সিভিল সার্ভিসে সংস্কার এবং জন-আকাঙ্খা পূরণে জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গঠন শীর্ষক সেমিনার খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারটি খুলনা মেডিকেল কলেজের এস এম সুলতান মিলনায়তনে শনিবার (২৫ জানুয়ারী) দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ খুলনা বিভাগের আয়োজনে এ সেমিনারে সংগঠনের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, হাজারো প্রাণ এবং কোটি মানুষের দীর্ঘশ্বাসের বিনিময়ে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামণ্ডলীর সকলে আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা সরকারের পাশে থেকে, সহযোগিতার মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই। চাকরিতে প্রবেশকালের ‘কোটা বৈষম্য’ দূর করতে যে ছাত্ররা তাদের বুকের রক্ত ঝরালো, চাকরিতে প্রবেশ করার পরের বৈষম্য দূর করে তাদেরকে সুন্দর একটা কর্মপরিবেশ উপহার দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সিভিল সার্ভিস সংস্কাররের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। সিভিল সার্ভিসের ২৫ টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত হয় ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। বিদ্যমান সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থায় জনসেবা পর্যালোচনা করতে গিয়ে অন্তরায় হিসেবে পরিষদ কর্তৃক কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সমস্যাসমূহ সমাধান করলে জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস সৃষ্টি হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জবাবদিহিতামূলক ও জনকল্যাণমুখী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারকে সুযোগ দেওয়া হলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জনপ্রশাসনের কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে। এতে অপচয় হ্রাস ও জনসেবার মান বৃদ্ধি পাবে। তাই পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে প্রত্যেক ক্যাডারকে তাদের-স্ব-গোত্রীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর সাথে সাংঘার্ষিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পুনরায় এসএসপি প্রথা চালু করতে হবে। পিএসসির সাহায্যে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের এসব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। রাষ্ট্রের কল্যাণে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সেবামূলক সিভিল সার্ভিস তৈরির বিকল্প নেই।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, একটি ক্যাডারের অধীনে অন্য ক্যাডারের পদোন্নতি পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ক্যাডারের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করবে অথবা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে (যেমন পিএসসি) এ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সকল ক্যাডারের জন্য সমান সংখ্যক পদ তৈরি করতে হবে, অতঃপর একই পদ্ধতিতে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। ক্যাডারের স্ট্রেস্থ অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় গ্রেডের পদ তৈরি করতে হবে, প্রচলিত পদমর্যাদা ক্রম বা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে সকল ক্যাডারের জন্য গ্রেডভিত্তিক পদমর্যাদা ক্রম নির্ধারণ করতে হবে, আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট সেক্টরের জনবল দ্বারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা উচিত। মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তর সংশ্লিষ্ট সভাসমূহ আয়োজন, নীতিনির্ধারণ ও পরিচালনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানকে প্রদান যেকোন অফিস আদেশ হবে সার্বজনীন যা একই গ্রেডের সকল ক্যাডারের জন্য প্রযোজ্য করতে হবে। রাষ্ট্রের সকল সেক্টরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের তফসিলভুক্ত পদ থেকে অন্য ক্যাডারের অদক্ষ ও অপেশাদার কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করলে জন-আকাঙ্খা পূরণে জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস সৃষ্টি করা সম্ভব।
এআর/৫৩